ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মহান মে দিবস

শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হোক
মহান মে দিবস

আজ মহান মে দিবস। দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবেও পরিচিত। শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন। শ্রমিকের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে প্রেরণাদানকারী দিন। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকরা তাদের নির্দিষ্ট শ্রমঘণ্টা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশের দাবিতে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ওই আন্দোলনের ১৩৬ বছর পার হলো। প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, যে দাবিতে সেদিন শ্রমিকরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, সেই অধিকার কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? বলা যায়, শ্রমিকদের দাবির অনেক কিছুই পূরণ হয়েছে। শ্রমিকরা এখন আর সমাজের অবহেলিত কোনো শ্রেণি নন। শ্রমিকের চাহিদা নিয়ে সরকার ও মালিকের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তা সত্ত্বেও শ্রমিক অসন্তুষ্টি রয়েই গেছে, কারণ তাদের জীবনের টানাপড়েনের অবসান এখনও ঘটেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে মে দিবসের তাৎপর্য এখনও প্রাসঙ্গিকতা বহন করে চলেছে।

আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর মহাসমারোহে মে দিবস উদযাপিত হয়। এদিন শ্রমিকের স্বার্থ নিয়ে সরকারি দল, বিরোধী দলসহ বিভিন্ন সংগঠন কথা বলে। শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি উচ্চারিত হয়। কিন্তু বাস্তবে শ্রমিকের অনেক দাবিই অপূরণীয় থেকে যায়। বিশেষ করে আমাদের দেশে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও মজুরি সন্তোষজনক নয়। এ দেশের সর্ববৃহৎ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। কিন্তু এ শিল্পের চালিকাশক্তি শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে। অন্যদিকে দেশের বেশির ভাগ শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা নেই। অনানুষ্ঠানিক খাতেই বেশির ভাগ শ্রমিক নিয়োজিত। কর্মপরিবেশও সন্তোষজনক নয়। পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনগুলোও আর আগের মতো সক্রিয় নয়। এই দেশে শ্রমিক আন্দোলনের যে অতীত ঐতিহ্য ছিল, তা এখন ম্রিয়মাণ। ফলে শ্রমিক বঞ্চনা প্রলম্বিত হচ্ছে। এই অবস্থার আশু অবসান হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশে জিডিপিতে শিল্পের ভূমিকা বাড়ছে। এর সঙ্গে সংগতি রেখে শ্রমিকের মর্যাদা ও মজুরি বাড়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু কেন তা আশানুরূপ হারে ঘটছে না, তা তলিয়ে দেখা জরুরি। দেশের উন্নতি তথা শিল্পায়নের জন্য অবশ্যই শ্রমিকের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আরেকটি দ্রষ্টব্য বিষয় হলো, করোনাকালে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ কর্ম হারিয়েছেন, কারও কর্মের সুযোগ রুদ্ধ হয়েছে। ফলে এদের অনেকে জীবন-জীবিকা নিয়ে অনিশ্চিতায় মধ্যে রয়েছেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও করোনাকালের রেশ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এটা প্রত্যাশা করা স্বাভাবিক যে, সবার উদ্যোগে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি কৃষি শ্রমিকসহ অনানুষ্ঠান খাতের সব শ্রমিকের অধিকারের কথাও ভাবতে হবে। উন্নত কর্মপরিবেশের পাশাপাশি শ্রমিকের জীবনমানের উন্নতিও ঘটবে। আর মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে উন্নত দেশে উপনীত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে শ্রমিকের অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এবং শিল্প মালিকরা এ নিয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন- এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত