হাই-টেক পার্ক

লক্ষ্য বাস্তবায়ন জরুরি

প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সরকারের অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ও এজেন্ডা। এখন লক্ষ আরও বিস্তৃত হয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হয়েছে। এই লক্ষে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে ব্রতী হয়েছে। লক্ষ বাস্তবায়নে দেশে বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে হাই-টেক পার্ক। সরকার আগামী দিনে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতকে রপ্তানি আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে দেখতে চায়। ২০২৫ সালের মধ্যে এই খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য। তাই তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে জেলায় জেলায় নেওয়া হয়েছে হাই-টেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ১০টি পার্কের কার্যক্রম। তবে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পার্কগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কার্যপরিধি একেবারেই কম। জানা যায়, জুঁতসই পরিবেশ না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান পার্ক থেকে গুটিয়ে নিয়েছে তাদের কার্যক্রম। কেউ কেউ আবার পার্কে বরাদ্দ নিয়েও শুরু করেনি কর্মকাণ্ড। অন্যদিকে পার্কে চালু থাকা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কল সেন্টার আর ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানাই বেশি। তদুপরি দক্ষ জনবল সংকটে ধুঁকছে চালু প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনও তথ্য পাওয়া গেছে, অনেক পার্ক অস্তিত্ব টেকাতে হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। তথ্যপ্রযুক্তির বাজার বিকশিত করতে স্থাপিত পার্কগুলো মূলত প্রশিক্ষণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সহজ কথায় বলা যায়, হাই-টেক পার্কগুলো খুঁড়িয়ে চলছে।

উল্লেখ্য, এরই মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি, যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক ও শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার, চট্টগ্রামে শেখ জামাল সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, নাটোরে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার, বরিশালে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক পার্ক এবং চুয়েট ও কুয়েটে আইটি ইনকিউবেটর চালু হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের সহায়তায় ১২ জেলায় ১২টি এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১১ জেলায় ১১টি হাই-টেক পার্কের নির্মাণকাজ চলছে। আরও ৩৪ জেলায় পার্ক করার পরিকল্পনা চলমান। দেখা যাচ্ছে, হাই-টেক পার্ক নির্মাণে সরকারের সদিচ্ছা ও একাগ্রচিত্ততার কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও কেন পার্কগুলো জমে ওঠছে না, তা প্রশ্ন বটে। প্রকাশ, ২০১৭ সালে চালু হওয়া যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের শুরুতে যে ৩৩ কোম্পানি ব্যবসার জন্য চুক্তি করেছিল, এর মধ্যে ২২ কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়েছে। বাকি ১১ কোম্পানির অধিকাংশই রুগ্ণ অবস্থায় টিকে রয়েছে। সিলেটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কেও প্রযুক্তি খাতের কোম্পানির তেমন কার্যক্রম নেই। পার্কটি এখনও শতভাগ প্রস্তুত নয়। এখন পর্যন্ত জায়গা বরাদ্দ নেওয়া ১৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র দুটি কার্যক্রমে গেছে। ব্যবসা শুরুর আগেই অনেক প্রতিষ্ঠান সরে গেছে। নাটোরের শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ইনকিউবেশন সেন্টারে ১০টি স্পেসের সাতটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু তিনটি আইটি প্রতিষ্ঠান সেখানে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কমবেশি এমনই অবস্থা অন্য হাইটেক পার্কগুলোর, যা অনভিপ্রেত।

হ্ইাটেক-পার্কগুলোর বেহাল দশার কারণ অনুসন্ধান জরুরি। কারণ এখানে সরকারের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে, ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগও নেহাত কম নয়। সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলছেন, বাস্তব সমীক্ষা ছাড়াই হাই-টেক পার্কগুলো গড়ে উঠছে। বলা হচ্ছে, যেসব স্থানে হাই-টেক পার্ক হচ্ছে, সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠেনি। ফলে আইটি-প্রকৌশলীরা সেখানে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এমনও বলা হয়, দেশজুড়ে হাই-টেক পার্ক না বানিয়ে সিলিকনভ্যালির মতো একটি এলাকাকে যদি তথ্যপ্রযুক্তির হাব হিসেবে গড়ে তোলা হতো, তবে দেশের আইটি খাত প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হতো। তবে এখন ভাবার বিষয় হলো, কীভাবে হাইটেক পার্কগুলো জমজমাট রাখা যায়। এই নিয়ে সরকার, উদ্যোক্তা ও বিষয় বিশেষজ্ঞদের সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হবে।