ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সম্ভাবনা

এখন ই-কমার্সের সম্ভাবনা অনেকদূর পর্যন্ত প্রসারিত

রেজাউল করিম খোকন, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক
এখন ই-কমার্সের সম্ভাবনা অনেকদূর পর্যন্ত প্রসারিত

আগামী চার বছরে ই-কমার্সের বাজার আরও প্রায় ৪০০ কোটি ডলার বাড়বে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সাল শেষে ই-কমার্সের বাজারের আকার ছিল ৬৬০ কোটি ডলার। এই বাজার আগামী চার বছরে আরও বাড়বে। ২০২৬ সাল নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একটি গবেষণার হিসাব দিয়ে ই-কমার্সের বাজার সম্প্রসারণের সম্ভাবনার এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সম্প্রতি। ফেইসবুকে সক্রিয় এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। ২০২৭ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১ কোটি ১৩ লাখ। ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ে শীর্ষ ১০টির মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম। ফেইসবুক, গুগল, অ্যামাজনের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে এসেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এর ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে। নাগরিকরা ফেইসবুকে বেশ সক্রিয় এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এই সূচকে ভারত ও ফিলিপাইন প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে। করোনা মহামারির ভয়াবহ প্রকোপের মধ্যে ব্যবসা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর। মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যভেদে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। করোনাকালীন সময়ে যেখানে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে ই-কমার্সের অনেক প্রতিষ্ঠান অতীতের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পণ্য ডেলিভারি দিয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন করে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। মূলত করোনাকালীন সময়টিতে ক্রেতাদের চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ভালো করছে। নিত্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষেত্রবিশেষে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। গত ২০১৯ সালেও দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। ২০২০ সালে এসে সেই প্রবৃদ্ধি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ বছর দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বহু গুণ বেড়ে গেছে গত বছরে তুলনায়। অর্জিত সুনাম, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তারা গ্রাহকদের জন্য মানসস্মত, উন্নত এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত করছে। বর্তমানে প্রতিদিন ২ লাখের বেশি ডেলিভারি দিতে হচ্ছে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে।

করোনা সংক্রমণ রোধে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। ওই সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিত্যপণ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি সচল রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় অনলাইনে নিরাপদে পণ্য ও সেবা সচল রাখার ব্যাপারে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। মূলত এসব কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছে। ফলে ব্যবসার প্রবৃদ্ধিও ঘটেছে উল্লেখযোগ্য হারে। শহরাঞ্চলের অনেক মানুষ আজকাল অনলাইন কেনাকাটায় বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আগে এ ক্ষেত্রে এক ধরনের দ্বিধা, সংকোচ, সন্দেহ সংশয় কাজ করত। এখন তা কেটে গেছে। বিশেষ করে, করোনা মহামারির প্রকোপে বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তব প্রয়োজনেই এখন মানুষ ই-কমার্সের শরণাপন্ন হচ্ছেন। কোভিড-১৯ মহামারি ই-কমার্সে দারুণ গতির সঞ্চার করার পেছনে বড় কারণ হলো, মানুষ এখন দোকানে দোকানে ঘুরে কেনাকাটা বা বাজার করার চেয়ে ই-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়টিকে অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করছেন।

ইলেক্ট্রনিক প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে দেশে ২০০৬ সালে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় বেসরকারিভাবে শুরু হয়। তখন অনলাইন বাণিজ্যের সরকারি অনুমোদন ছিল না। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে সরকার ই-কমার্স বিষয়ে আলাদা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে পুরোপুরিভাবে চালু হয় ই-কমার্স। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অর্থনীতির নতুন এ খাতটিকে। এখন সময়টা ই-কমার্সের। ই-কমার্সের মানে ইলেকট্রনিক কমার্স। যার অর্থ হলো, ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়ের কাজসম্পন্ন করা। দুই দশক আগে বাংলাদেশে ই-কমার্সের তেমন ব্যাপকতা ছিল না আজকের মতো। তখনও মানুষ ভাবতে পারেনি বাজারে না গিয়ে ঘরে বসেই তার চাহিদা মাফিক পছন্দের জিনিসটি খুব সহজেই কিনে ফিতে পারবেন। এখন প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। ই-কমার্স এখন শহুরে শিক্ষিত সমাজে বেশ চালু হয়ে গেছে বলা যায়। এর মাধ্যমে সহজে ঝক্কিঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে চাহিদা অনুযায়ী কেনাকাটা করা যায় বলে দিনে দিনে আরও মানুষ ই-কমার্সের আওতায় চলে আসছে। গোটা অর্থনীতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে ই-কমার্স, এ কথা বলা যায় এখন অনায়াসেই। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের। নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই সেক্টরে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক তরুণ-তরুণী এককভাবে আবার কেউবা দলগতভাবে এই সেক্টরে নিজেদের নাম লেখাচ্ছেন উদ্যোক্তা হিসেবে। ফলে প্রতিবছরেই বাড়ছে উদ্যোক্তা, বাড়ছে কর্মসংস্থান। অনলাইনের প্রচার ও প্রসার যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে ব্যবসার সুযোগ। অনলাইনে কেনাকাটা, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফেইসবুকে কেনাকাটা সবই ই-কমার্সের আওতাভুক্ত। ই-কমার্সে দিনে দিনে কেনাকাটা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পণ্যের সহজলভ্যতা ও পণ্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য। যে পণ্যটি সম্পর্কে ক্রেতারা জানতেন না, এখন ই-কমার্সের সুবাদে ওই পণ্য সম্পর্কেও সহজে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারছেন। যশোরের একটি নকশিকাঁথা অনেকের পক্ষেই যশোর গিয়ে কেনা সম্ভব নয়। কিন্তু ই-কমার্স সেই সুযোগটি করে দিয়েছে। যে নারী ঘরে বসে কেক বা মজার পিঠাপুলি বানাতেন আর চেনাজানা পরিচিতজনের কাজে বিক্রি করতেন, এখন ওই অচেনা নারীর কেক ও পিঠাপুলি চেনা-অচেনা অনেকে কিনছেন ই-কমার্সের বদৌলতে।

দেশীয় বাজারে ই-কমার্সে বেশি কেনাবেচা হয় ফ্যাশন অর্থাৎ জামাকাপড়, শাড়ি, জুতো, জুয়েলারি ও ইলেকট্রনিক পণ্য। এগুলোর লেনদেন হয় নগদ টাকায় এবং অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে। ই-কমার্সের দেশীয় বাজার প্রসারিত হচ্ছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে হলে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে প্রতিবেশী দেশের ই-কমার্স উদ্যোক্তারা বাজার দখল করবে। ই-কমার্সের বিস্তৃতির জন্য সরকারকে আরও সচেষ্ট হতে হবে। কারণ সরকারিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য আর্থিক লেনদেনে ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এখনও ই-কমার্স নিয়ে সরকারিভাবে কোনো নীতিমালা প্রণীত হয়নি। নীতিমালা না থাকার কারণে ই-কমার্সে প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে আস্থার ঘাটতি তৈরি হতে পারে। যা ই-কমার্সের বিকাশের পথে বিরাট বাধা হয়ে উঠতে পারে। আজ সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে, আমাদের অর্থনীতিতে অফুরন্ত সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে ই-কমার্স।

ই-কমার্সের দুর্বলতার দিক হচ্ছে, কেউ প্রতরণার শিকার হলে অভিযোগ দেয়ার সুযোগ নেই। প্রচলিত পদ্ধতির কেনাকাটায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে কেউ অভিযোগ করলে তার প্রতিকার পেতে পারেন। কিন্তু ই-কমার্সে প্রতিকার পাওয়ার পথ নেই। তবে বর্তমানে নাগরিক জীবনের জটিলতা ও ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে গিয়ে কেনাকাটার প্রবণতা ক্রমেই কমে আসছে। এ কারণে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল সহজেই বলা যায়।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর গোটা খাতটি এখন ভুগছে আস্থার সংকটে। সম্প্রতি খুব অল্প সময়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতসহ গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। শুরুতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে ‘অস্বাভাবিক’ সব অফার দিচ্ছে। পরে দেখা যায়, অগ্রিম অর্থ নিলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করছে না। ভোক্তাদের অভিযোগ, পণ্যের টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে তারা পণ্য পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য সরবরাহকারী বা মার্চেন্টরা বলছেন, দিনের পর দিন তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। দীর্ঘ সময় ধরে এ অর্থ আটকে থাকছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। কয়েক মাস পর ‘পণ্য স্টকে নেই’ বলে গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহক বা মার্চেন্টদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই রাখছে না ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।

ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে কর আদায় বাড়াতে হলে রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কার প্রয়োজন। আবার কর সুবিধা যৌক্তিকভাবে দিতে হবে। ডিজিটাল অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে এ খাত থেকে কর আদায়ে জোর দেয়া দরকার। ডিজিটাল অর্থনীতির সম্প্রসারণ হলেও কাঙ্ক্ষিত কর আদায় করা যাচ্ছে না। কর দেয়ার পদ্ধতি সহজ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া ফেইসবুক, গুগল, অ্যামাজনের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের কাছে কর আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে। ফেইসবুক, গুগল, অ্যামাজনসহ ৯টি অনাবাসী প্রতিষ্ঠান কর দিয়েছে মাত্র ৩৮৫ কোটি টাকা। ফেইসবুক, গুগল, অ্যামাজনের মতো অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে এসেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এর ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ফেইসবুক, গুগল, অ্যামাজনসহ ৯টি অনাবাসী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাত্র ৫৮ কোটি টাকার মতো ভ্যাট পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সব মিলিয়ে কর মিলেছে ৩৮৫ কোটি টাকা। গুগল, ফেইসবুক, অ্যামাজনসহ ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বছর ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ২০১৯ সালের হিসাবে, দেশের পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান আগের পাঁচ বছরে গুগল, ফেইসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানকে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ডিজিটাল বিজ্ঞাপন দিয়েছে। কিন্তু এনবিআরের হিসাব বলছে, মাত্র ১৩৩ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফর্ম থেকে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ১৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার পাবে এবং ২০২৭ সাল নাগাদ এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১ কোটি ১৩ লাখ। নেটফ্লিক্সের বাংলাদেশে গ্রাহকসংখ্যা এখন ২ লাখ। বছরে আয় ২০০ কোটি টাকা। চরকি, বায়োস্কোপ, টফির মতো দেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মও আছে। ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়ে শীর্ষ ১০টির মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর অবকাশ-সুবিধা, নগদ সহায়তাসহ নানা প্রণোদনা দেয় সরকার। তবে আগামী জুন মাসে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর অবকাশ-সুবিধা উঠে যাচ্ছে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা বিক্রিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। ফেইসবুক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘ছায়া’ আছে; কিন্তু বডি নেই। এ দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের অফিস থাকতে হবে। ডিজিটাল অর্থনীতি থেকে কর আদায় বাড়াতে হলে কর প্রশাসনকে দক্ষ করতে হবে। যেকোনো সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকতে হবে। করোনা ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। প্রায় ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। তবে ডিজিটাল অর্থনীতিতে কোথা থেকে আয় সৃষ্টি হচ্ছে, তা অনেক সময় জানা যায় না। ফলে কর আদায় কঠিন হয়ে পড়ে। কর আদায় বৃদ্ধিতে সংস্কারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনীহা আছে। অনাবাসী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ দেশে অফিস থাকা উচিত। একসময় ডিজিটাল অর্থনীতিই পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে ডিজিটাল অর্থনীতির সুবিধা যেন দারাজের মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়ে না যায়, তাই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর সুবিধা ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো উচিত। ঝামেলাহীনভাবে শুল্ক-কর দেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অনেক উদ্যোক্তা গড়ে উঠবে। ফ্রিল্যান্সাররা ১০০ টাকা আয় করলে হাতে পায় মাত্র ৩০ টাকা। করসহ আনুষঙ্গিক খাতে খরচ হয়ে যায় বাকি টাকা।

বাংলাদেশে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটে গেছে আরও আগেই। কিন্তু তারপরও সরকার ই-কমার্স নিয়ে একটা নীতিমালা করতে পারেনি। এটা ই-কমার্স এর যথাযথ বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে উঠছে। নীতিমালা না করলে প্রতারণা বাড়ে এবং মানুষের আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়। এ দেশে ই-কমার্সের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ই-কমার্স এখন পর্যন্ত যতটা বিকশিত হয়েছে বেসরকারি এবং ব্যক্তি উদ্যোগে। এ বিষয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার নানা দিগন্ত উন্মোচিত হলেও বেশ কিছু সমস্যা এখন সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে বড় একটি সমস্যা হলো প্রতারণা। কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের নানাভাবে ঠকাচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করছে না। প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা ও মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে ই-কমার্স ব্যবসা আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে এরই মধ্যে। প্রতিষ্ঠানগুলোর লোভনীয় অফারে এবং বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ প্রিঅর্ডারের টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। বর্তমানে দেশে যে ই-কমার্স সাইটগুলো রয়েছে তার সবগুলো বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিতে পারছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান সঠিক মানের পণ্য, সঠিক দাম নিশ্চিত করে না, ফলে ক্রেতারা প্রতারিত ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এর প্রতিকারে ই-কমার্সকে বিশেষ নীতিমালার আওতায় আনা প্রয়োজন। এর আলোকে বিধিবিধান চালু করতে হবে। ফলশ্রুতিতে ক্রেতারা অনলাইনে কেনাকাটায় ভরসা পাবে। ই-কমার্সে পেমেন্ট সিস্টেম নিয়েও সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশে ই-কমার্সে দেনদেনের সিংহভাগ এখনও ক্যাশ অন ডেলিভারিতে হয়ে থাকে। কার্ডে লেনদেন এখনও অনেক কম। সুষ্ঠু বিকাশের জন্য ই-কমার্সের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। নিরাপদে শপিংটা অনেকেই অনলাইনে করবেন, ধারণা করা যায়। আমাদের এখানে ই-কমার্সের ক্রেতারা মূলত শহরকেন্দ্রিক। এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে ই-কমার্সের কর্মকাণ্ড বেশি লক্ষ্য করা গেলেও আশা করা যায়, ক্রমেই তা দেশজুড়ে প্রসারিত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত