ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পর্যটন সুবিধা বাড়াতে হবে

যথাযথ পদক্ষেপ নিন
পর্যটন সুবিধা বাড়াতে হবে

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। নাতিশীতোষ্ণ এ দেশের অধিকাংশ এলাকা সমভূমি হলেও বৈচিত্র্যে ভরপুর। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীগুলো এ দেশকে অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে। আর বঙ্গোপসাগরের পাড় ঘেঁষে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের আকর্ষণের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া পার্বত্য এলাকার ছোট-বড় পাহাড়গুলোর মায়াবী হাতছানি সমৃদ্ধ করেছে এ দেশকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, প্রকৃতির এ অবারিত সম্পদকে পর্যটনশিল্পে যথাযথ উপস্থাপন ও প্রয়োগ সম্ভব হয়নি। বলা হচ্ছে দেশের পর্যটন গন্তব্যগুলোতে বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় বিদেশি পর্যটক আসা কমে যাচ্ছে। কম খরচে ভ্রমণ ও বিনোদেনের সুবিধা পেয়ে পর্যটকরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের পর্যটকরাও উচ্চব্যয়ের কারণে এবার কক্সবাজারসহ দেশের প্রধান গন্তব্যগুলো এড়িয়ে পাশের দেশে ঈদের ছুটি কাটাতে গেছে। দেশে পর্যটকবান্ধব পরিবেশ ও অন্য সুযোগ-সুবিধা গড়ে না ওঠায় এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটক এসেছিল ৬ লাখ ২১ হাজার ১৩১ জন, ২০২০ সালে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫১৮ জন এবং ২০২১ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৬ জন। অর্থাৎ করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ২০২০ সালের তুলনায় বিদেশি পর্যটক কমেছে ৪৬ হাজার ৩৩২ জন।

এদিকে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। অথচ স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এসেও খাতটি নবজাতক পর্যায়ে রয়ে গেছে। ২০২১ সালে দেশের জিডিপিতে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ছিল মাত্র ২.২ শতাংশ আর কর্মসংস্থানে অবদান ১.৮ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রধান পর্যটন গন্তব্যগুলোয় দুর্বল অবকাঠামো, প্রশাসন ও স্থানীয় অধিবাসীদের পর্যটনমনস্ক না হওয়া, পর্যটনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে দেশের পর্যটনশিল্প এগোতে পারছে না। লক্ষণীয়, করোনা শেষে প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিদেশি পর্যটকের ঢল নামলেও বাংলাদেশে উল্টো চিত্র। এ নিয়ে দেশের পর্যটন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি বলেন, দেশে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া হোটেলে যাতায়াত, খাবারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি। এ খাতে সরকারের নজর একেবারে নেই বললেই চলে। পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে যে যার মতো ভাড়া নিচ্ছে, এ ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি দরকার।

সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্প কেন প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হচ্ছে না, এ নিয়ে ভাবতে হবে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, পর্যটন এলাকার হোটেল, মোটেল, বার, স্পা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, সাগরে ক্যাসিনো, বিনোদনকেন্দ্রসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে সরকারকে ট্যাক্স-ভ্যাট কমাতে হবে। অর্থাৎ সুলভে ও অনায়াসে বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিনোদন অবশ্যই পর্যটন বিকাশের অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে পাশাপাশি পর্যটনের নিরাপত্তা ও সাশ্রয়ী পর্যটনের কথাও ভাবতে হবে। যেখানে দেশীয় পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ নিরাপদ ও সুলভ করা সম্ভব হয়নি, সেখানে বিদেশিদের প্রত্যাশা করা দুরূহ। তাই পর্যটকদের পাশাপাশি যারা ব্যবসা করবে, তাদেরও নিরাপত্তা দিতে হবে সরকারকে। বেসরকারি খাতকে পর্যটন ব্যবসার প্রসারে অবকাঠামো ও নীতিসহায়তা দিতে হবে। দ্রুত অনলাইন ভিসা চালু এবং আগমনী ভিসার (অন অ্যারাইভাল) পরিধি বাড়াতে হবে। এ নিয়ে পর্যটনসমৃদ্ধ দেশগুলোর ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত