ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজারদর

ভোক্তার অনুকূলে নয়
বাজারদর

প্রতিবছর ঈদুল ফিতর ঘিরে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর একটি রেওয়াজ আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। বাড়তি দামের ভার বইতে গিয়ে অনেকের নাভিশ্বাস উঠেছে। এরই মধ্যে ঈদের পাট চুকে গেলেও বাজার স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। বরং দাম বাড়ার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। অর্থাৎ ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরেও রাজধানীর বাজারগুলোতে চিরচেনা চিত্র এখনো ফেরেনি। ক্রেতা তুলনামূলক কম। সেই হিসেবে পণ্যের সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক হলেও দাম বেশ চড়া। এর মধ্যে মুরগির দাম বেড়েছে আরেক দফা। ঈদের আগে গরু, খাসি ও মাছের বাড়তি দাম কমেনি এখনো। দাম বাড়ার তালিকায় যোগ হয়েছে আলু-পেঁয়াজ। কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতেই ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। দু-একটি সবজি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দামও বাড়তি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ শান্তিনগর, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ রেলগেইট বাজার ঘুরে এমন চিত্রই প্রকাশ করেছে সহযোগী পত্রিকা। ব্যবসায়ীদের বরাতে বলা হয়, তীব্র দাবদাহের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য পেঁয়াজে। দেশে শিলাবৃষ্টির কারণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়াকেও দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।

পণ্যের দাম বৃদ্ধির ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যবসায়ী কর্তৃক কোনো না কোনো অজুহাত দাঁড় করানো হয়। এবার যেমন দাবদাহ ও শিলাবৃষ্টি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে কথিত অজুহাতের মাত্রাতিরিক্ত অপব্যবহার করার প্রবণতা লক্ষণীয়। অতিরিক্ত মুনাফা লোভের উপায় হিসেবে একে দেখা হয়। ফলে জনভোগান্তি লেগেই থাকে। অথচ কর্তৃপক্ষ দাম স্বাভাবিক থাকার প্রতিশ্রুতি সর্বদা দিয়ে থাকে। যেমন, উৎপাদন ভালো থাকায় আগামী কোরবানির ঈদসহ পরবর্তী সময় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলেও বাজারে কোনো সমস্যা হবে না বলে দাবি করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির বাজার দর অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের কেজিতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮.৫৭ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজিতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১১.৭৬ শতাংশ। এদিকে ঈদের আগে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস ও চিনির দাম এখনো কমেনি। পাশাপাশি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে নানা পদের সবজির দামও। এখন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকা দরে, যা ঈদের আগে বেড়েছিল। অন্যদিকে ঈদের আগে থেকে চলমান চিনির সংকট এখনো কাটেনি। চাহিদা স্বাভাবিক হয়ে এলেও এখনো সরকার নির্ধারিত থেকে বেশি দামেও কিনতে হচ্ছে পণ্যটি। পাশাপাশি বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকলেও কমেনি সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। উল্টো কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ ভোক্তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই, আগামী দিনগুলোর জন্য অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে।

বলা হয়ে থাকে, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কর্তৃপক্ষের বাজার হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কোনো অদৃশ্য কালোহাত যদি নিয়মরীতি উপেক্ষা করে বাজারে হস্তক্ষেপ ঘটায় সে ক্ষেত্রে নিশ্চয় দমনের ব্যবস্থা রয়েছে। খুচরা দোকানিদের বরাতে প্রকাশ, ঈদের আগ থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন পরিবেশকরা। আবার এমনও অভিযোগ রয়েছে, চিনি কিনতে হলে দোকানদারকে বাধ্যতামূলক আরও কয়েকটি পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন পরিবেশকরা। এটা অসংগত। সরকারকে অবশ্যই যথাযথভাবে বাজার তদারকি করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আগামী ঈদুল আজহা ঘিরে মুনাফালোভীরা বেপরোয়া হয়ে উঠবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে- এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত