ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আপনাদের ভাবনা

জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে

মোস্তফা কামাল
জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে

দক্ষতা হলো একটি তালার চাবির মতো। ওটি ছাড়া হাজারভাবে চেষ্টা করলেও সফলতার তালা খুলবে না।

ঠিক তেমনিভাবে জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি হবে এবং দরিদ্রতা দূর হবে।

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি সহজেই চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়। শাঁই শাঁই করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ছোট একটি ভূখণ্ডে আমরা অনেক মানুষ বসবাস করি। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটির বেশি। মোট আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অভাব, দরিদ্র্য, বেকারত্ব রয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে গতিতে এগিয়ে চলছে, বাংলাদেশ ঠিক সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। মানবসম্পদ হলো দেশের জনসাধারণ। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম উপকরণ হলো মানবসম্পদ। মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশ অগ্রসর হয়, সমৃদ্ধি লাভ করে এবং তার উপর ভিত্তি করে দেশের অবস্থানের পরিমাপ চলে। মানব সম্পদ উন্নয়নের সঙ্গে দরিদ্র বিমোচনের সম্পর্ক রয়েছে। দরিদ্র ও উন্নয়ন সংজ্ঞায়িত ও পরিমাপ করার ক্ষেত্রে গত চার দশকের গবেষণায় বেশ পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়।

মানব জাতির উন্নয়ন ছাড়া মানব উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নকে একটি নৈতিক প্রত্যয় হিসেবে মেনে নিয়ে অনেকেই এর বিষয়গত সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা হচ্ছে কাম্য পরিবর্তনই উন্নয়ন। এই অর্থে মানব উন্নয়ন হচ্ছে মানব নির্ধারিত মানবের কাম্য পরিবর্তন। কোনো পরিবর্তনকে উন্নয়ন বলার জন্য ওই পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট অধিকাংশের চাওয়াটা একটা অনিবার্য পূর্বশর্ত হতে পারে, কিন্তু যথেষ্ট পূর্বশর্ত নয়। পরিবর্তনশীল মানুষের পরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয় কাম্যতাই হচ্ছে উন্নয়নের আধেয়। আরও স্পষ্ট করে যদি বলতে হয়, তাহলেই বলি মানব সম্পদ উন্নয়নের অর্থ হলো, স্বাস্থ্য, বাসস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন হওয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হওয়া। যাতে দক্ষ জনশক্তি সমাজ ও বিশ্বে তাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারে এবং সমাজে তাদের চাহিদা সৃষ্টি হয়। মানব সম্পদ উন্নয়নে জন্য কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। বিশ্বের অনেকগুলো দেশ আছে, যে দেশগুলোতে প্রাকৃতিক সম্পদ অফুরন্ত। অন্যদিকে জাপান বলতে গেলে প্রাকৃতিক সম্পদহীন একটি দেশ। তারপরও কারিগরি শিক্ষায় অগ্রসর হওয়ার কারণে দেশটি বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশের মর্যাদা পাচ্ছে। তাই নিঃসংকোচে বলা যায়, কারিগরি শিক্ষা ছাড়া জনদক্ষতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন জাতিকে সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে।

বাংলাদেশর অর্থনীতি এক সময় পুরাপুরি কৃষিনির্ভর ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্পে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উজ্জ্বল অবস্থায় পৌঁছে গেছে এরই মধ্যে। এছাড়া আমাদের রপ্তানি পণ্য তালিকায় নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হচ্ছে। আজকাল বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন শিল্পজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক পণ্য পৃথিবীর অনেক দেশে যাচ্ছে। এগুলোর বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে এক সময়ে বাংলাদেশের যে পরিচিতি ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে সময়ের পালাবদলে। প্রযুক্তির নানা বিকাশ, শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির রাজত্ব, গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কাঠামোতে এনেছে যুগান্তরী পরিবর্তন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা আবশ্যক। উন্নত দেশের এটাই মূল চালিকাশক্তি। ব্যক্তিগত জীবনে উন্নতির জন্য স্ব-স্ব ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। তবে দক্ষতা রাতারাতি অর্জন করা সম্ভব নয়। মূলত উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং কর্মপরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে ইহার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। ২০২১ সালে আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ধনী দেশ হিসেবে আবিভূত হবে। উন্নয়নের এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে।

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত