ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চিনির বাজার তিতা কেন?

জিহাদ হোসেন রাহাত
চিনির বাজার তিতা কেন?

দেশে এ বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আখ উৎপাদনের পরেও অস্থির চিনির বাজার। করোনা-পরবর্তী প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- তার ওপর বিশ্ববাজারে ডলার সংকটের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার দরুণ সব মিলিয়ে একটি সংকটময় সময় পার করছি আমরা। সংকটের এ সময়ে দেশে হুঁ হুঁ করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম।

অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া এ পণ্যসামগ্রির দামে দিশেহারা দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ। দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষের কষ্ট কতটুকু বেড়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির তালিকায় এবার যুক্ত হলো চিনির দাম।

সর্বশেষ চলতি মাসের ৩ এপ্রিল প্রতি কেজি চিনির দাম প্রায় ১৫ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে চিনির এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণে কষ্ট বেড়েছে দেশের সব শ্রেণির ভোক্তাদের। গত বছরের নভেম্বরেও যে চিনির কেজি প্রতি বাজার দর ছিল ১১৫-১২০ টাকা। সেটি এ বছরের মে মাসে এসে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। ২০২২ সালের অক্টোবরেও প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করা হতো ৯০-৯২ টাকা দরে। চিনির দাম অল্প সময়ে এত বেশি বাড়ার পেছনের কারণ কী? চলুন খুঁজি সেই উত্তর।

দেশে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর যথেষ্ট পরিমাণ চিনি উৎপাদনের পরেও বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট চক্র। এ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে জিম্মি দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ। অধিক কষ্ট পোহাচ্ছেন দেশের নিম্নআয়ের মানুষগুলো। ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে চিনি কেনা দরিদ্র মানুষকে এখন সেটি কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। অবস্থাদৃষ্টে বলা যায়, এসব মানুষের নীরব আর্তনাদ দেশের নীতিনির্ধারকের কানে পৌঁছায় না। আবার ঘটনাক্রমে পৌঁছালেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। এখন প্রশ্ন হলো- এমন অবস্থা আর কত দিন চলতে থাকবে? আর কতদিন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি অবস্থায় থাকবে সাধারণ মানুষ?

প্রচুর পরিমাণ আখ চাষ এবং দেশে পর্যাপ্ত চিনিকল থাকা সত্ত্বেও কেন বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করতে হচ্ছে আমাদের? তা খতিয়ে দেখা দরকার। সম্প্রতি গণমাধ্যমের সংবাদে দেখলাম সরকার কেজি প্রতি প্রায় ৮৩ টাকা দরে তুরস্ক থেকে চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিদেশ থেকে চিনির আমদানি কমাতে দেশে চিনির অধিক উৎপাদনের জন্য সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে। ডলার সংকটের এ সময়ে আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে ডলারে আরও সংকট থেকে বাঁচার জন্য দেশে উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়াই উত্তম। লোকসানে থাকা চিনিকলগুলোকে লাভের কাতারে নিয়ে আসতে হবে। মাঝেমধ্যেই পত্র-পত্রিকায় দেখি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো লোকসান গুনছে। যেখানে আমাদের দেশের বেসরকারি খাতগুলো লাভ করছে সেখানে সরকারি খাতের এমন বেহালদশা কোনোভাবে কাম্য নয়।

নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর কষ্ট লাঘবে সরকার টিসিবির মাধ্যমে চিনি বিক্রি করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। চিনি নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিনির বাজার তিতা করার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আসার বিকল্প নেই। দেশের হতদরিদ্র মানুষগুলোর কষ্ট লাঘবে চিনিসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার এখনই সময়।

তরুণ কলামিস্ট

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত