ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবুজ ঢাকার প্রত্যাশা

বৃক্ষনিধন নয়
সবুজ ঢাকার প্রত্যাশা

রাজধানী শহর ঢাকা আক্ষরিক অর্থে ইটপাথরের শহরে পরিণত হচ্ছে। অথচ এই প্রাণহীন শহরে এক সময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল খাল, ছিল বৃক্ষরাজি আর পাখির কলকাকলি। যান্ত্রিক এ শহরে এখন তাপদাহ বয়ে চলে, স্বস্তির জন্য নেই তেমন বৃক্ষছায়া, যা আছে তাও প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে। উন্নয়নের নামে বৃক্ষনিধন যে এক মারাত্মক ভ্রান্তি, তা যেন কর্তৃপক্ষ অনুধাবনই করতে পারছে না। সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডির সাতমসজিদ এলাকার সড়কদ্বীপ উন্নয়নের নামে শুরু হয় গাছ কাটা। এর প্রতিবাদে গত ৩০ জানুয়ারি আন্দোলনে নামেন এলাকাবাসী। এর পর কেটে গেছে ৩ মাস। গত সোমবার হঠাৎ একই এলাকায় আবার শুরু হয় গাছ কাটা, তবে এবার গভীর রাতে। রাত পৌনে ২টায় এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে জড়ো হন স্থানীয়রা। ছুটে আসে পুলিশও, বন্ধ হয় গাছ কাটা। তবে এর আগেই কেটে ফেলা হয় শতাধিক গাছ। শুধু সাতমসজিদ রোড নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের নামে এভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে সবুজ। প্রকল্পের পর প্রকল্পের করাতে কাটা পড়েছে বৃক্ষরাজি। আর উধাও হয়ে যাচ্ছে গাছের ছায়া। খাতা-কলমে একটি কাটলে তিনটি গাছ লাগানোর কথা। তবে রাজধানীতে কোথায়, কত বিকল্প গাছ লাগানো হয়েছে- তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তাপদাহ যখন ঢাকাকে পোড়াচ্ছে, ঠিক তখন গাছ কাটার বিষয়টি নগরবাসীর মনে দাগ কেটেছে। প্রতিবাদ ও ক্ষোভ জানিয়েছে।

দেখা গেছে, সরকার নগর বৃক্ষায়ণ ও সবুজ ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে বৃক্ষরোপণ করেছে, তাই আবার কয়েক বছর পর কাটা হচ্ছে। তাহলে এভাবে অর্থ শ্রাদ্ধ করার কি দরকার ছিল? বৃক্ষ যে রোদের তপ্ত অস্বস্তি থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়, একথা নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। উল্লেখ্য, এ মৌসুমে রাজধানীতে তাপ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। টানা ২২ দিন বৃষ্টিহীন ছিল নগরী। এর পর মাঝে বৃষ্টি হলেও কমেনি গরমের অস্বস্তি। গরমে হাঁসফাঁসের পেছনে নগরীর গাছপালা কমে যাওয়াকে দূষছেন পরিবেশবিদরা। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) ২০২০ সালের জরিপে জানিয়েছে, ১৯৯৯ সালে ঢাকার কেন্দ্রীয় এলাকায় সবুজ ও খোলা জায়গার পরিমাণ ছিল ২১ শতাংশ। ক্রমে তা কমে ২০২০ সালে ঢাকার সবুজ এলাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ শতাংশ। বর্তমানে তা সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। বাসযোগ্য নগরীর জন্য এটি একটি ভয়াবহ তথ্য। এদিকে আইপিডির নির্বাহী পরিচালকের বরাতে প্রকাশ, ২০২০ সালের পর প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পগুলো সবুজকে ধ্বংস করেই করা হচ্ছে। অথচ আমাদের বলা হচ্ছে, পরিবেশ সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সংবেদনশীল। বাস্তবে ভিন্নতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছাদবাগানে উৎসাহী করতে ১০ শতাংশ কর ছাড়ের ঘোষণা আছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। অথচ সরকারি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেই আছে বৃক্ষ রক্ষায় উদাসীনতার অভিযোগ। বিষয়টি বিস্ময়কর। ঢাকার একের পর এক এলাকা উন্নয়নের করাতে বৃক্ষহীন হচ্ছে- এটাই বাস্তবতা।

পরিতাপের বিষয়, বৃক্ষের প্রতি নগরবাসীর আবেগ কর্তৃপক্ষ আদৌ আমলে নেয় বলে মনে হয় না। ছলেবলে কৌশলে বৃক্ষ কাটা হচ্ছেই। অথচ বৃক্ষ রেখেও যে উন্নয়ন করা যায়, এটা বোধ হয় তাদের বোধগম্য নয়। তাই বৃক্ষ তথা পরিবেশ সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনকে বিশেষ উদ্যোগী হতে হবে। তবে বারবার গাছ লাগানো হবে আর নানা অজুহাতে কেটে আবার নতুন গাছ লাগানো হবে- এটা বন্ধ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত