কালের কড়চা

চিকিৎসা সেবার অভিজ্ঞতা

ফনিন্দ্র সরকার, কলাম লেখক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, [email protected]

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

হ্যাঁ, ‘নারায়ণা’ হচ্ছে একটি হাসপাতালের নাম। ভারতের কর্ণাটক প্রদেশের ব্যাঙ্গালোরে ব্যোমাছান্দ্রা নামক একটি ছোট শহরে নারায়ণা হৃদালয় নামে এই হাসপাতালটি বিশ্বসেরা হৃদরোগ নিরাময় কেন্দ্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। যার প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ ডা. দেবী প্রসাদ শেঠি। দেবী প্রসাদ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ কনাডা জেলার ফিন্নিগলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি বাবা-মায়ের অষ্টম সন্তান। শেঠি মেডিকেলের ৫ম গ্রেডে অধ্যয়নকালে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন সার্জন কর্তৃক বিশ্বের প্রথম হৃৎপি- প্রতিস্থাপনের কথা শুনে কার্ডিয়াক সার্জন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯১ সালে ৯ দিনব্যাপী শিশু ‘রনি’র হৃৎপি- অপারেশন করেন, যা ভারতের প্রথম সফল হৃৎপি- অস্ত্রোপচার। তিনিই কোলকাতায় মাদার তেরেসার চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ব্যাঙ্গালোরে প্রথমে ‘মনিপ্যাল হার্ট ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর তিনি বৃহৎ পরিসরে নারায়ণা হেলথ নামে সংগঠন গড়ে তোলেন। এ সংগঠনের দেবী শেঠিই চেয়ারম্যান। যার অধীনে অনেকগুলো হাসপাতাল পরিচালিত হয়ে আসছে। ব্যাঙ্গালোর ছাড়াও ভারতে বিভিন্ন প্রদেশে এর শাখা রয়েছে। যা হোক, আমি নারায়ণা ব্যাঙ্গালোরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তার কিঞ্চিত বর্ণনার জন্যই কলম ধরেছি। কেননা, বাংলাদেশের মানুষ বিশেষত হৃদরোগ পরিষেবার জন্য ভারতে ব্যাঙ্গালোরে নারায়ণা হাসপাতালের দ্বারস্থ হয়। এছাড়াও চেন্নাই, ভেলোরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে থাকে। তবে হৃদরোগ নিরাময়ের জন্য ব্যাঙ্গালোরের ‘নারায়ণা’র প্রতি দুর্বলতা অনেক বেশি। কারণ ভগবান খ্যাত ডা: দেবী প্রসাদ শেঠি এখানেই রোগী দেখেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ সামর্থ্যবানরাই দেবী শেঠির কাছে যেতে আগ্রহী হন। দেবী শেঠির ব্যাপারে একটি কথা প্রচলিত যে, তিনি অত্যন্ত মানবিক এবং ক্ষেত্র বিশেষ অনেক কম খরচে কিংবা বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। বস্তুত : আমার সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও কম খরচে চিকিৎসা নেয়ার লোভ সামলাতে না পেরেই শুধু যাতায়াত ও থাকা-খাওয়াসহ চিকিৎসার জন্য সামান্য কিছু টাকা-পয়সা নিয়ে ব্যাঙ্গালোরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

আমি কেন ব্যাঙ্গালোরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই, তার আগের ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না। হ্যাঁ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে আমি প্রচ্ছদ শিল্পী ও কবি বন্ধু হাবিব সিদ্দিকীর সঙ্গে তার কর্মক্ষেত্র নারায়ণগঞ্জের সমবায় মার্কেটের ৪র্থ তলায় উপস্থিত হই। কারণ আমিও নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা। একুশের বইমেলায় প্রকাশিতব্য আমার দুটো বইয়ের প্রচ্ছদ শিল্পী হাবিব ভাই মেটার রেডি করে রাখেন। আমার প্যানড্রাইভে গ্রহণ করার জন্যই সেখানে যাওয়া। কথাবার্তা বলার ফাঁকে হঠাৎ আমার বুকে প্রচণ্ড অসহনীয় ব্যথা শুরু হয়ে যায়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকলে হাবিব সিদ্দিকী ও তার দুই সহযোগীসহ আমাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে আমার পরিবারের সদস্যদের টেলিফোনে জানিয়ে দেয়া হলে তারা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসে। আমার স্ত্রী শাশুড়ি ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা নারায়ণগঞ্জ বালুর মাঠে ইসলামিক হার্ট সেন্টারে আমাকে নেয়া হয়। সেখানে ইসিজি করে জানা যায়, আমার ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটার্ক করেছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হলে, সেখান থেকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয়। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে আমার শ্যালিকা মিতালী রানী কর্মকার ভর্তির সব ব্যবস্থা করে রাখে আগেই। জাতীয় হৃদরোগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুর আলম আমার চিকিৎসা দায়িত্ব গ্রহণ করে অতিদ্রুত চিকিৎসাসেবা দিয়ে শঙ্কামুক্ত করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা যায়, আমার হার্টে তিনটি ব্লক। জরুরিভিত্তিতে একটিতে রিং বসানো হয়। বাকি দুটোতেও পরবর্তী সময়ে ১ মাসের মধ্যে রিং বসানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এমতাবস্থায়, ৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা উপলক্ষ্যে থাকতে হয়। এর মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য আমাকে হাসপাতালে দেখতে যান। আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমার ভাই-বোন, ভগ্নিপতি, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই ঢাকার হাসপাতালে ছুটে আসে। তবে কবি বন্ধু হাবীব সিদ্দিকী ও তার দুই সহযোগী আমাকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যে উপকার করেছেন, যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তা কোনোদিনও ভুলব না। ঢাকার চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে পারিবারিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাকি চিকিৎসা ব্যাঙ্গালোরের দেবী শেঠির কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করি। ঢাকার চিকিৎসাসেবার প্রতি আমি যথেষ্ট সন্তুষ্ট হওয়ার পরও ভারতে রওনা দেই ২০ মার্চ ২০২৩। সহযাত্রী হিসেবে আমার স্ত্রী শিখা রানী ও স্ত্রীর বড় ভাই চন্দন কর্মকার ছিলেন। স্ত্রীর পাসপোর্ট জটিলতার কারণে ভারত যাত্রায় একটু বিলম্ব হয়। ২০ মার্চ শ্যামলী বাসে হরিদাসপুর বর্ডার দিয়ে কোলকাতা যাই। বেনাপোলে নানা বিড়ম্বনার শিকার হই। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা সময় লাগে বর্ডার পার হতে। এ বিষয়ে অন্য একদিন লেখার ইচ্ছা রইল। ২১ তারিখে বিকেল ৩টায় কোলকাতা পৌঁছে দমদম বিমান বন্দরের কাছে একটি হোটেলে রাত্রিযাপন করে ২২ তারিখে ভোর ৬.৩০ মিনিটের ইন্ডিগো’র ফ্ল্যাইটে উঠে ৮.৪৫ মিনিটে ব্যাঙ্গালোরে পৌঁছে যাই। ব্যাঙ্গালোর বিমানবন্দর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে নারায়ণা হাসপাতালের অবস্থান। ভারতীয় ১৫০০ টাকায় ভাড়া করা প্রাইভেট কারে দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে যাই গন্তব্যস্থলে। নারায়ণা হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ‘লজ, গেস্ট হাউস বা হোটেল। ৮০০ টাকায় (প্রতিদিন) একটি লজে উঠি। ছোট দুটি কামড়ায় ২টি খাট, একটি টয়লেট, একটি কিচেন। নিজেদের রান্না করে খাবার ব্যবস্থা রয়েছে। এ অঞ্চলে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। জীবন যাত্রার ব্যয় আকাশচুম্বি। ২২ মার্চ লজে রেস্ট নিয়ে পর দিন ২৩ মার্চ নারায়ণা হাসপাতালে রেজিস্ট্রেশন করতে যাই, নিয়মমাফিক প্রথমে রোগীকে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। ভারতীয় ১০০ রুপিতে রেজিস্ট্রেশন করে চিকিৎসা যাত্রা শুরু করি। নারায়ণার নিয়মনীতি বুঝে উঠা খুবই মুশকিল। কারণ এখানে বাংলা ভাষার প্রচলন নেই। ঝাড়ুদার থেকে শুরু করে ডাক্তার পর্যন্ত অধিকাংশ বাংলা জানেন না। ভারতীয় বহুল প্রচলিত হিন্দিও এখানে প্রসিদ্ধ নয়। এখানকার স্থানীয় কর্ণাট ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা বেশি। অথচ আশ্চর্যের বিষয় এখানের শতকরা ৮৫ শতাংশ ভাগ রোগী বাঙালি। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি। হেল্পডেস্ক নামক একটি সেল রয়েছে। বাংলাদেশি রোগীদের সাহায্যের জন্য বাংলা ভাষা জানা কর্মী রয়েছেন। তাদের সাহায্য পাওয়াটা খুবই কষ্টকর। কারণ বাঙালি রোগীর তুলনায় সহযোগিতাকারীর সংখ্যা খুব কম। আমার সুবিধা এই যে, আমার স্ত্রীর বড় ভাই চন্দনদা কর্ণাট, হিন্দি, ইংরেজি ভালো জানেন। তাই যাবতীয় ফরমালিটিস শেষ করতে বেশি সময় লাগেনি। তবে এর মাঝখানে ছুটির ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলাম। ইমার্জেন্সি বিভাগ ছাড়া এখানে ছুটির সময় সব কিছু বন্ধ থাকে। এমনকি ওষুধের দোকানও যা খুবই আশ্চর্যজনক। আমি দেবী শেঠিকে দেখাব।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দেবী শেঠিকে প্রথম দফায় সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে ডা. পোনেত ভার্মাকে দেখাতে হল। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন কর্মী পোনেত ভার্মার নাম লিখে দিলেন, কাউন্টারে ৭০০ টাকা জমা করে সিরিয়ালে দাঁড়াতে হলো। ২৩ মার্চ বিকেলে পোনেত ভার্মাকে দেখাতে সক্ষম হলাম তিনিও ভালো ডাক্তার। একজন অভিজ্ঞ কার্ডিয়াক সার্জন। তিনি বেশ কিছু পরীক্ষা দিলেন। সবগুলো পরীক্ষা করতে সময় লেগে যায় ২ দিন। ১৫ হাজার ৫০০ রুপি ক্যাশ কাউন্টারে আগেই জমা করতে হয়েছিল পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট নিয়ে হাজির হই পোনেত ভার্মার কাছে। তিনি সব কিছু দেখে শারীরিক অনেকগুলো সমস্যা চিহ্নিত করলেন। প্রথমেই তিনি হার্টে আরও দুটো রিং পড়ানোর পরামর্শ দিলেন জরুরিভিত্তিতে। যে পরামর্শ আমাকে ঢাকার ডা: নুর আলম সাহেবও দিয়েছিলেন। আমি এই ভেবেই এখানে এসেছিলাম যেন আমাকে আর রিং পড়াতে না হয়, ওষুধেই সেরে যাবে, এমন বিশ্বাস কিংবা ভরসা ছিল মনে। কিন্তু সে বিশ্বাস ভরসায় ছেদ পড়ে গেল ডা. ভার্মার কথায়। ডা. ভার্মাকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন আমাকে ডা: দেবী শেঠির কাছে রেফার করেন। চন্দন দা খুব চমৎকার হিন্দি ভাষায় বিষয়টি উপস্থাপন করায় ডা: ভার্মা দেবী শেঠির কাছে রেফার করলেন। তিনি পরীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে লিভার বিশেষজ্ঞ ও কিডনি বিশেজ্ঞর কাছেও রেফার করলেন। বলে রাখা ভালো নারায়ণা হেলথ-এর অধীনে এখানে আরও কয়েকটি চিকিৎসালয় রয়েছে। মজুমদার শাহ্ মেডিক্যাল সেন্টার, ট্রমা সেন্টার, আই হাসপাতাল। মজুমদার শাহতে অত্যাধুনিক সব ধরনের পরীক্ষাগার বা ল্যাব রয়েছে। এখানে বিভিন্ন বিভাগে রোগী ভর্তি করা হয়।

আমার প্রধান সমস্যা হার্টের, তাই দেবী শেঠির কাছে কখন দেখাব, সেজন্য আমি অস্থির। চিকিৎসার ফাইল নিয়ে হাসপাতালের মূল ফটকের বেইজমেন্টে দেবী শেঠির কাউন্টার অর্থাৎ এ কাউন্টারে ফাইল জমা দিতে হবে। এই ফাইল পাঠিয়ে দেয়া হয় দেবী শেঠির কাছে। তিনি ফাইল পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেন। কোন্ কোন্ রোগীকে তিনি দেখবেন। প্রতিদিন গড়ে নতুন পুরোনো মিলিয়ে ১০০ রোগী দেখেন। সকাল ১০টা থেকে (মধ্যাহ্ন বিরতি ছাড়া) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আমি ২৫ মার্চ বিকেল ৪.৩০ মিনিটে ডা: দেবী শেঠিকে দেখাবার সৌভাগ্য অর্জন করি। হাসপাতালের মূল ভবনের ৫ম তলায় দেবী শেঠির বিশালাকারের চেম্বার। পাশেই বড়সর অপেক্ষমাণ রুম। আমার সঙ্গে ছিল স্ত্রী ও তার বড় ভাই চন্দনদা। ফাইল ও বাংলাদেশের এনজিও রিং পড়ানোর ক্যাসেট পর্যালোচনা করে তিনিও পোনেত ভার্মার কথারই পুনরাবৃত্তি করেন। আর কোনো উপায় নেই আমাকে রিং পড়তেই হবে। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, নম্র এবং অপরিসীম ধৈর্যশীল একজন ডাক্তার। পরম মমতার সঙ্গে কথাবার্তা ও পরামর্শ দিয়ে রোগীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলেন। তার হাতের স্পর্শেই যেন অর্ধেক ভালো হয়ে যায় রোগী। তিনি আমাকে ডা: উদয় বি খলনকারের কাছে রেফার করেন। উদয় বি খলনকার দেবী শেঠির সমপর্যায়ের একজন চিকিৎসক। সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন। দেবী শেঠির মতোই বহুবিধ পুরস্কারে ভূষিত। ডা: উদয় বিখলনকারের সহকারী শ্রীমতি শিল্পা অত্যন্ত বিনয়ী ও বিদূষীও বটে। তিনি আমাকে চিকিৎসায় নানাভাবে সহযোগিতা করেন। অত্যন্ত মমতাময়ী একজন নারী তার ব্যবহারে আমি মুগ্ধ। ডা: উদয় বি খলনকার আমাকে হার্টস্ক্যান পরীক্ষার সুপারিশ করলেন। মজুমদার শাহ্তে গিয়ে এই পরীক্ষা করতে ১৫,০০০ হাজার রুপি খরচ হয়। হার্টস্ক্যান রোগীদের জন্য এটা চূড়ান্ত পরীক্ষা বলে জানা যায়। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখানো হয় ডা: উদয় খলনকারকে। তিনিও আমাকে রিং পড়ানোর কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, ঢাকার ডা: নুর আলম সাহেব যা বলেছেন একই কথা ভারতের বিখ্যাত ডা: দেবী শেঠিও বলেছেন। ঢাকায় যথাসময়ে যথার্থ চিকিৎসা হয়েছে বলেও দেবী শেঠি উল্লেখ করেন। তিনি ডা: নুর আলমের প্রশংসাও করেন।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুসারে আমি হার্টে রিং বসাতে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। এই রিং পড়াতে কত খরচ হবে সে বিষয়ে দেবী শেঠিজী খুব কম খরচের কথা বললেও পরবর্তী সময়ে আমাকে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়েছে। নারায়ণায় একটি চ্যারিট্যাবল সেকশন আছে সেটার চার্জে রয়েছেন লক্ষ্মী দেবী। জানা গেছে লক্ষ্মী দেবী দেবী শেঠির শাশুড়ি। তিনিই হার্টের বাইপাস, ওপেন হার্ট, রিং বসানো সহ যাবতীয় সার্জারির খরচ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মালিক। দেবী শেঠি এখানেই পাঠান যারা প্যাকেজ অর্থ দিতে অক্ষম। লক্ষ্মী দেবী কারও ক্ষেত্রে খুবই মানবিক আবার কারো ক্ষেত্রে খুবই অমানবিক। আসলে কাকে কত টাকা কমাতে হবে, তার একটা সাংকেতিক নির্দেশনা দেবী শেঠিই দিয়ে থাকেন। চিকিৎসার জন্য এমন দরদাম সিস্টেমটা ভালো লাগেনি। এতে একটা বৈষম্যমূলক বিষয় ফুটে উঠে। তবে খরচ যেটাই হোক চিকিৎসাসেবার মান খুবই ভালো। হাসপাতালের সবকিছুই সুন্দর শৃঙ্খলায় আবদ্ধ। পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও সর্বোত্তম। তবে বিদেশি রোগীদের বড় ধরনের অপারেশনে বিল পে করতে হয় ডলারে। এটা খুবই অসঙ্গতি মনে হয়। কেননা, এই ডলার সংকটকালে বিশেষ করে বাংলাদেশী রোগীদের জন্যে খুবই বিড়ম্বনার। আগে জানা না থাকলে অনেকে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কেননা, ডলারকে ভারতীয় রুপি করলে আবার রুপি দিয়ে ডলার ক্রয় করতে হবে। ডলার ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে বিরাট ব্যবধান রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। কেন মার্কিন ডলারের এত গুরুত্ব দিতে হবে? বাংলাদেশি নাগরিকরা চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে রুপিতে লেনদেন করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আমি নারায়ণা হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। হৃদরোগ ছাড়াও অন্যান্য যেমন লিভার, কিডনি ও নিউরো ডাক্তার দেখিয়েছি। প্রত্যেক জায়গায় ভালো সেবা পেয়েছি। ১ মাস চিকিৎসার জন্য থেকে এখন দেশে আছি। ভারতীয় ডাক্তারদের আচার-ব্যবহার অত্যন্ত মানবিক। তাদের ভদ্রতায় যে কোনো মানুষ মোহিত হবে। রোগীদের তারা অসাধারণ সম্মান প্রদর্শন করেন। বাংলাদেশ এর বিপরীত। যে কারণে এখানকার মানুষ চিকিৎসার জন্যে ভারতমুখী হয়। পরিশেষে, আমাকে সুস্থ করার জন্য যারা সহযোগিতা ও সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।