ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভূমিকম্প আতঙ্ক

সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা জরুরি
ভূমিকম্প আতঙ্ক

শুক্রবার রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সেদিন ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার সিটি সেন্টার থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে দোহারে। যার গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ভূমিকম্পে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই ভূকম্পনের প্রকৃতি বিষয় বিশেষজ্ঞ ও জনমনে ভয়ের কারণ হয়েছে। ঢাকার এত কাছে এত সক্রিয় ভূচ্যুতি রয়েছে সেটাও খুবই চিন্তার বিষয়। তাই প্রশ্ন ওঠেছে ঢাকার এত কাছে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কতটা আতঙ্কের? উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের তারাব এলাকায় ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ঢাকা শহর ও এর আশপাশের এলাকা বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে ভূতত্ত্ববিদরা আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ভূতত্ত্ববিদদের বরাতে প্রকাশ, এর আগে যেসব ভূমিকম্প লক্ষ্য করা গেছে, সেগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫-৪০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হয়েছে। এ ভূমিকম্পটি সেগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত অনেকটাই অগভীর। ঢাকার এত কাছে এত সক্রিয় ভূচ্যুতি রয়েছে সেটা উদ্বেগের বিষয় হয়েছে। ঢাকায় বিল্ডিং এর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্যে। তবে শুক্রবারের ভূমিকম্পের মতো ঢাকার আশপাশে উৎপত্তিস্থল রয়েছে, এমন ভূমিকম্পও মাঝেমধ্যেই হতে দেখা গেছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা অঞ্চলে গ্রীষ্মের সময় অনেকগুলো ছোট ছোট ভূমিকম্প দেখা গেছে। আবার ঢাকার কাছে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলেও গত ২০ বছরের মধ্যে একাধিক ছোট ছোট ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭.৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে। অর্থাৎ ঢাকার আশপাশে ছোট মাত্রার ভূমিকম্প উৎপত্তির নজির আগেও ছিল। এটা বড় আকার ধারণ করলেও বিপদ। বিশেষজ্ঞদের বরাতে প্রকাশ, বাংলাদেশে ৮ মাত্রা বা তার চেয়ে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেরকম ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের অন্তত ৬ হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে, আর অন্তত ৩ লাখ মানুষের প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভূমিকম্প কোনো পূর্বাভাস দিয়ে আসে না। সংগত কারণেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। শহরের অবকাঠামো ভূমিকম্প সহনীয় হতে হবে, আবার উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হলে উদ্ধার কার্য পরিচালনার মতো ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি অপ্রতুল। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা যায়, ঢাকা শহরের ৭৬ শতাংশ রাস্তা সরু হওয়ায় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া ৬০ শতাংশ ভবন মূল নকশা পরিবর্তন করে গড়ে ওঠায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের সময় এ অপরিকল্পিত ভবনগুলো সঙ্গে সঙ্গেই ধসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভূমিকম্প অসহনশীল ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা নেয়া দরকার। জনগণকেও ভূমিকম্পের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত