জাপান সফর সফল প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

এস. এম. আশিক বিল্লাহ, আহ্বায়ক, ডেমোক্রেটিক পার্টি

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গৌরবজনক হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের হাতে পদ্মা সেতুর চিত্রকর্ম তুলে দিয়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ এবং এই দেশের জনগণ আর বিশ্বের দরবারে অবহেলার পাত্র নয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এটা ষষ্ঠ সফর। প্রতিটি সফরেই বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কে গতি সঞ্চার করেছে। নানাবিধ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্বাধীনতার ১ বছর পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাপান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এর পর থেকেই জাপানের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক বহমান রয়েছে। শেখ হাসিনার এবারের সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এ সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ১৯৭৩ সালে বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের স্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সরকারের আমন্ত্রণে দেশটিতে প্রথম সফর করেছিলেন। সেই সফরেই জাপান-বাংলাদেশ আর্থিক সহযোগিতার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। সে সময় যমুনা সার কারখানা, কর্ণফুলী সার কারখানা, যমুনা সেতুসহ কয়েকটি বড় প্রকল্পে জাপানি অর্থায়নে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গৃহীত হয়। ঐতিহাসিক সেই সফরটি আজও বাঙালি হৃদয়কে বিভিন্নভাবে আন্দোলিত করে। বাংলাদেশকে এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ি বলত আমেরিকা। সেই আমেরিকার মাটিতেই বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরে বিশ্ববাসীর সামনে পদ্মা সেতুর চিত্রকর্ম তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এই বিশ্বব্যাংক এক সময় পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে অর্থায়ন প্রত্যাহার করেছিল। সে সময় এদেশের কিছু সরকারবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষকরা হাততালি দিয়ে বলে বেড়াচ্ছিল- পদ্মা সেতু আর হবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে সেই পদ্মা সেতু দিয়ে এখন গাড়ি চলছে। এ বছরই চলবে রেল। শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতুর গৌরব এখন শোভা পাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় নিউইয়র্কে। শেখ হাসিনার এবারের জাপান সফর অনেকটাই বর্ণাঢ্যময়। অতীতের যেকোনো সফরের চেয়ে এ সফরের গুরুত্ব অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিই গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। জাপান একটি শান্তিপ্রিয় উন্নত প্রযুক্তির দেশ। দেশটির মানুষও কর্মবীরের মর্যাদায় সিক্ত।

জানা গেছে, এ সফরে ৮টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি, শুল্ক, আইসিটি, গণপরিবহন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, গণপরিবহনে মেট্রোরেল বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে দুটি দেশ ঐকমত্য হয়েছে। যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর হয়েছে বর্তমান বাস্তবায়নতায় তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিতে। প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, দেশ তত অগ্রসর হবে। প্রযুক্তির ব্যাপকতায় নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। আমরা দেখছি প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের ভেতর দিয়ে কৃষি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তায় দক্ষতা অর্জন সম্ভব হবে। বাংলাদেশ জাহাজ শিল্পে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। গণপরিবহনে বিপ্লব সাধিত হচ্ছে। এসব সেক্টরে জাপানি সহযোগিতা নিশ্চিত হলে উভয় দেশই বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে। আশার বিষয় হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো সরকারিভাবে আমাদের দেশে জাপানের বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে জাপানি বেসরকারি বিনিয়োগও উৎসাহিত হবে। প্রধানমন্ত্রী এবারের সফরে জাপানের উদ্যোক্তা, শিল্পপতি তথা বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছেন। যে বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়িক এবং বাণিজ্যিক পরিবেশের চিত্র তুলে ধরেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে যদি রাজনৈতিক কমিটমেন্ট না থাকে, তবে সেখানে কখনও বৈদেশিক বিনিয়োগ হয় না। প্রধানমন্ত্রী সেদিক থেকে যথেষ্ট কমিটেড। যে কারণে জাপানিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে অধিক উৎসাহী হয়ে উঠেছে।

পাকিস্তান যখন অর্থ সংকটে জর্জরিত, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে আমদানি ব্যয় মেটাতে পড়ছে না। মুদ্রাস্ফীত আকাশচুম্বী। দেশটিতে ফুটপাতের দোকানে এক কাপ চায়ের দাম এখন ৫০-৬০ টাকা। সেই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহজ শর্তে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এই কৃতিত্ব একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, বিশ্বনন্দিত জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন। পাশাপাশি আগামী দ্বাদশ নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে স্বচ্ছ হবে বলে জনগণ প্রত্যাশা করে।

জনগণ প্রত্যাশা করে, রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে এবার আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

উল্লেখ্য যে, গত শুক্রবার (স্থানীয় সময়) কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের দ্বিপক্ষীয় সভা কক্ষে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সুনাককে উদ্ধৃত করে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন- যুক্তরাষ্ট্রের (ইউকে) প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’ সুনাক বলেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে আপনাকে অনুসরণ করছি। আপনি একজন সফল অর্র্থনৈতিক নেতা।’ সুনাক প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশংসা করায় আমরাও গর্বিত।