অনলাইনে কেনাবেচনা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আবার সুযোগ সন্ধানীরা এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদও পেতে চলছে। অনেক অনলাইন পোর্টালের বিরুদ্ধে কারসাজি ও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। সেসব নিয়ে গ্রাহকের মধ্যে যেমন ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে বিষয়টি বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে, তাহলো ফেইসবুকে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হচ্ছে জাল মুদ্রা। ‘যারা অর্ডার করতে চাচ্ছেন; কিন্তু এখনও করেননি, তারা খুব দ্রুত অর্ডার দিন। আর ৩ থেকে ৪ দিন নেয়া হবে অর্ডার।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকের একটি আইডি থেকে এভাবেই প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হচ্ছে জাল মুদ্রা। প্রকাশ, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার আর টেলিগ্রামের মতো যোগাযোগ অ্যাপসগুলোতে রয়েছে ক্লোজড গ্রুপও। যেখানে জাল মুদ্রা তৈরি চক্র এবং পাইকারি ক্রেতারা যোগাযোগ করে থাকে। এসব মাধ্যমে পাইকাররা জাল মুদ্রার অর্ডার করলে তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে নির্ধারিত ঠিকানায়ও। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত পার্সেল ও কুরিয়ার সার্ভিসগুলোকে। পণ্যের তথ্য ভুল দিয়ে জুতা বা অন্য পণ্যের ভেতর এ জাল মুদ্রা পাচার করা হচ্ছে। বিষয়টি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নজরেও এসেছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নানা অপরাধ কার্যক্রম চললেও জাল মুদ্রার কেনাবেচা নতুন সংযোজনই বলতে হবে।
তথ্য অনুযায়ী, ‘জাল টাকা (বিক্রি করি)’ নামে একটি আইডি থেকে প্রকাশ্যে জাল মুদ্রা বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। সেখানে জাল মুদ্রা তৈরির নানা সরঞ্জাম এবং কীভাবে তা তৈরি হচ্ছে- ভিডিওর মাধ্যমে তা দেখানো হচ্ছে। এ ছাড়াও টিকটক ভিডিও তৈরি করে পাইকারদের নানাভাবে আকর্ষণ করার চেষ্টা হয়েছে ওই আইডিতে। সেখানে অন্তত ১২ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। যোগাযোগের জন্য রয়েছে মোবাইল নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও। উক্ত আইডির সূত্র ধরে ফেইসবুকে সার্চ দিয়ে ‘জাল টাকার ডিলার’, ‘জাল টাকা বিক্রি করি কম মূল্য’, ‘জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র’, ‘জাল টাকার গ্রুপ’ ও ‘জাল টাকা’ নামে আরও পাঁচটি আইডির সন্ধান মেলে। এসব আইডি থেকে প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল মুদ্রা বিক্রি করা হচ্ছে। ফেইসবুকের আইডিগুলো ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রায় সবাই নিজেদের আসল জাল মুদ্রা তৈরি ও বিক্রির দাবি করে প্রতারকদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। অনেক ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন বলেও এসব আইডিতে লিখেছেন। সূত্রমতে, এসব জাল মুদ্রা বিক্রিতে নানা অফারও দেয়া হচ্ছে। ১ হাজার টাকা নোটের ১ লাখ টাকার জাল মুদ্রা ১০ হাজার টাকায়, ৫০০ টাকা নোটের ১ লাখ টাকার জাল মুদ্রা ১২ হাজার টাকা, ১০০ ও ২০০ টাকা নোটের প্রতি ১ লাখ জাল টাকা ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। ঈদ মৌসুমে পাওয়া যায় ৫০ টাকা, ২০ টাকা ও ১০ টাকার নোটও। এগুলোর দামও বেশি। দেখা যাচ্ছে, অবৈধ ব্যবসাটি তারা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিচালনা করছে।
জাল মুদ্রা তৈরি ও বিক্রি গুরুতর অপরাধ। এটা দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা জারি রাখতে পারে। সংগত কারণেই অবৈধ এ ব্যবসা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এই নিয়ে কোনো রকম শৈথল্য প্রত্যাশিত নয়।