ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভটভটি নছিমন বৈধতা পাচ্ছে

পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে
ভটভটি নছিমন বৈধতা পাচ্ছে

সড়ক-মহাসড়কে বিশেষভাবে তৈরি নছিমন-করিমন চলাচলের বৈধতা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে। এ বাহনগুলো পরিবেশ দূষণ রোধ, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও জীবিকা রক্ষার যুক্তিতে সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত, সংগত কারণে নিষিদ্ধ। কিন্তু এরই মধ্যে জানা গেল সরকার এসব যানবাহনের বৈধতা দিতে যাচ্ছে এবং শিগগির গেজেট প্রকাশিত হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশীয়ভাবে তৈরি হওয়া যানবাহন। কারিগরি মানোন্নয়ন ও নতুন মডেল অনুমোদনের শর্তে এলাকা ও সড়কভেদে এ ধরনের নির্দিষ্ট সংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে। এ বিষয়ক খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করে এরই মধ্যে প্রজ্ঞাপন শেষে গেজেট প্রকাশের অপেক্ষা। প্রকাশ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশের পর পুরো নীতিমালা কার্যকর করার কথা জানিয়েছে দেশের সড়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিআরটিএ) কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, হাইকোর্ট শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে নির্মিত নছিমন, করিমন, আলমসাধু বন্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছেন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ এসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ এসব যানবাহন দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি মহাসড়কে চলাচল বন্ধে সংশ্লিষ্টদের বরাবর তাগিদপত্র জারি করেছে। অন্যদিকে আবার এসব যানবাহন অনুমোদনও দেয়া হচ্ছে! তাই বিআরটিএর পরিবহনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

ভটভটি ও নছিমন বৈধতা পাওয়ার খবরে সংশ্লিষ্ট অনেকেই উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহনকে বৈধতা না দিয়ে অবিলম্বে উচ্ছেদ বা নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল। এসব যানবাহন নিবন্ধন পেলে সড়কে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি যানজট ও জনজট বাড়বে। লক্ষণীয়, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক নয়, জাতীয় মহাসড়কেও দাপিয়ে চলছে অবৈধ ছোট যানবাহন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ এ ছোট যানবাহন। তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট যানবাহনের মাত্র দেড় শতাংশ বাস ও মিনিবাস। যদিও বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত ৫৭ লাখ ১০ হাজারের বেশি যানবাহন চলছে। এর বাইরে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অসংখ্য নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, ইজিবাইক, ব্যাটারির রিকশা চলছে। এসব গাড়ি কারিগরিভাবে সড়কের উপযোগী নয়। ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন কোনো কিছুই মানসম্মত নয়। ফলে দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কে হতাহতের বড় অংশই এসব ছোট যানবাহনের যাত্রী; কিন্তু সাশ্রয়ী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এসব যানবাহনের ওপর নির্ভরশীল। প্রশ্ন হলো, নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, ইজিবাইক ও পাখি নামে পরিচিত ব্যাটারিচালিত রিকশা অবৈধ, এমনকি সরকারিভাবে ইজিবাইক আমদানি নিষিদ্ধ সত্ত্বেও এগুলো কীভাবে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে?

বলা যায়, পরিবহন ব্যবস্থার সার্বিক অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণেই ভটভটি ও নছিমনের মতো সমস্যার উদ্ভব ঘটেছে। এখন এসব অবৈধ ছোট যানবাহনের সঙ্গে অন্তত ৫০ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িয়ে গেছে। তারপরও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব যানবাহনকে বৈধতা দেয়া হবে আত্মঘাতী। কারণ এসব যানবাহন রেখে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ায় চ্যালেঞ্জ বাড়বে। বর্তমান টেকসই যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। বাড়াতে হবে গণপরিবহন, যাত্রীবান্ধব ব্যবস্থাপনা। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত