ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ জরুরি

দরকার নিরাপদ গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন
অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ জরুরি

অগ্নিদুর্ঘটনা যেন নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এর অধিকাংশই ঘটছে গ্যাস সংযোগের জায়গায়। গত বছর গ্যাস সরবরাহ লাইনে আগুন থেকে ৭৯৫টি অগ্নিকাণ্ড ও অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। চলতি বছরও গ্যাস লিকেজের কারণে বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে আগুনে পুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ভাগ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের জায়গায় কোনো সংস্কার হচ্ছে না। একবার লাইন দিয়ে আর কোনো খবর নেওয়া হয় না। তিতাসের পাইপলাইন ২০ বছর মেয়াদের, সেটারও মেয়াদ ১০ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। ফলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। মনিটরিং, দেখভাল ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। আবার ডিস্ট্রিবিউশন লাইন মেরামতের কোনো খবর নেই। আর মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই এই গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। পাশাপাশি যারা গ্যাসের লাইন ব্যবহার করছেন, তাদের অধিকাংশই সচেতন নন। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাবকাটারায় রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত হন নারী ও শিশুসহ ১২৪ জন। এই ঘটনার পর সরকার বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। অনেকে সেই সময় বলেছিল, এত বড় বার্ন ইনস্টিটিউটের কী প্রয়োজন। কিন্তু এখন পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বার্ন ইনস্টিটিউট।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২২ সালে দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে, যার অধিকাংশই ঘটেছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও গ্যাসের কারণে। চলতি বছরও গ্যাস লিকেজের কারণে বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। গত ৭ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে সাততলা একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ২৫ জনের মত্যু হয়। আহত হয় দেড় শতাধিক মানুষ। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা গ্যাস থেকে হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি। গত ৫ মার্চ রাজধানীর ধানমন্ডির সায়েন্সল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ছয়জন মারা যান, আহত হন অন্তত ৪০ জন। জমে থাকা গ্যাস থেকেই সায়েন্সল্যাব এলাকার ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। গত ৪ মে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্টিল মিলে বিস্ফোরণে দগ্ধ সাতজনের মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন। ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণে শিশুসহ ৩৪ মুসল্লির মৃত্যু ঘটে। পরে তদন্তে জানা যায়, তিতাস সংযোগ লাইনের লিকেজে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমে এবং হঠাৎ বিদ্যুতের স্পার্কে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, আগুনে এত মৃত্যুর পরও কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফিরছে না?

অগ্নিকাণ্ডে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। ধনী লোকটি ক্ষণিকের মধ্যে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে। এভাবে হিসাবে করলে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি ব্যাপক। সংগত কারণেই অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি। এ জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, কারখানা পরিদর্শন বিভাগ, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকতে হবে। যারা সার্ভিলেন্স ও মনিটরিংয়ের দায়িত্বে আছেন, তাদের আরও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সব ধরনের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইনকে নিরাপদ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত