ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ধানের ফলন ভালো

কৃষকের দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়
ধানের ফলন ভালো

এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় কৃষক ধানের ভালো ফলন পাচ্ছেন। এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। মাঠের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। তাই কৃষি কর্মকর্তারাও দ্রুত কেটে নিতে কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ বৃষ্টিপাত শুরু হলে তারা সমস্যায় পড়তে পারেন। এ অবস্থায় দেশব্যাপী ধান কাটার রীতিমতো উৎসব শুরু হয়েছে। তবে ভালো ফলন হলে উৎপাদন খরচ মিটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন কি-না এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক। যেমন শস্যভান্ডারখ্যাত দিনাজপুরের হিলির বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে পাকা সোনালি ধান। চলতি বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ভালো দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ উঠবে কি-না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক। যাদের নিজের জমি তারা কিছুটা লাভবান হলেও বিপাকে পড়েছেন বর্গাচাষিরা। কৃষকের বরাতে প্রকাশ, প্রতি বছর রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ হলেও এ বছর তেমন একটা ছিল না। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-বৃষ্টিও হয়নি। তবে ভালো ফলন হলেও ধানের দাম কম। এমনটা হলে কৃষকের খরচ তোলাই কঠিন। কেননা, যেখানে এক বিঘা জমির ধান কাটতেই লাগছে ৫ হাজার টাকা, সেখানে ধানের মণ ১ হাজার ১০০ টাকা থাকলে লাভের মুখ দেখবেন না অনেক কৃষক। আর বর্গাচাষিরা পড়বেন চরম দুর্দশায়। তাই ধানের দাম বাড়ানোর দাবি উঠছে তাদের মধ্যে।

এদিকে রোববার সারা দেশে শুরু হচ্ছে সরকারিভাবে বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। এবারের বোরো মৌসুমে আমনের চেয়ে দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং চালের দাম ৩ টাকা বাড়িয়ে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে সরকারিভাবে ধানের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক বরাবরই খাদ্যগুদামে চাল বিক্রি করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এছাড়া চালকল মালিকরাও নির্ধারিত দামে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে চান না। ফলে এ মৌসুমেও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই ধান সংগ্রহ নিয়ে এরকম পরিস্থিত তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে ওয়াকেবহাল বলে আমরা ধারণা করতে পারি, তারওপরও দাম নির্ধারণে কেন বাস্তবতাকে ধর্তব্য ধরা হয় না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আরেকটি বিষয়, ধানকাটা আরও আগে শুরু হলেও সরকার কেনা শুরু করেছে দেরিতে, এতে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে ধান বিক্রি করেছে। এতে কৃষকের ক্ষতি হয়ে আরও বেশি। আবার এমনও তথ্য রয়েছে, বিভিন্ন জেলায় কৃষক সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করছেন। গুদামের চাহিদা অনুযায়ী ধান প্রস্তুত করতে গেলে প্রতি মণে আরও ৫ থেকে ৭ কেজি কমে যায় বলে জানান কৃষকরা। এছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে বাড়তি পরিবহন খরচ, বিক্রয়ে অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতায় পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন তারা। অর্থাৎ ধান বিক্রিতে হযবরল অবস্থা অব্যাহত রয়েছে।

সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে অবশ্য কৃষকের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। উৎপাদন খরচের সাপেক্ষে দাম নির্ধারণ করতে হবে। সার, বিদ্যুৎ, বীজ, মজুরি খরচ বাড়ছে, বাড়ছে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি- ধানের দাম নির্ধারণে এসব অবশ্যই আমলে নিতে হবে। আর ধান কেনা প্রক্রিয়া করতে হবে সহজ ও সাবলীল। ধানের ন্যায্য মূল্য পেয়ে কৃষক যাতে আগামীতে ধান চাষে আরও উৎসাহিত হয় তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত