ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অপ্রতিরোধ্য কিশোর গ্যাং

ঢাকার বাইরেও থেমে নেই
অপ্রতিরোধ্য কিশোর গ্যাং

সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং এক আতংকের নাম। রাজধানীর পাড়া-মহল্লা কিংবা কোনো আবাসিক এলাকায় নানা নামে এরা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বেপরোয়া মনোবৃত্তির এসব কিশোর নাগরিকদের জন্য অস্বস্তি বয়ে নিয়ে আসছে, আবার কখনও কখনও নিজেদের মধ্যে বিভেদে জড়িয়ে পড়ছে। এতে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। ভয়াবহ তথ্য হলো, কথিত কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতি এখন রাজধানীর সীমানা ছাপিয়ে দেশের ছোট-বড় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন- চট্টগ্রামে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। খবরে প্রকাশ, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্রবাজি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে প্রায় সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে কিশোররা। তাদের ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে ‘গডফাদাররা’। কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে অনেকেই রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। দিন যত যাচ্ছে, ততই ভয়ংকর উঠছে কিশোর গ্যাং। দিন-দুপুরে তারা ছিনতাই করছে। কথায় কথায় মারামারি ও অস্ত্রবাজি করছে। খুন করতে দ্বিধাবোধ করছে না। সর্বশেষ সোমবার রাতে নারীঘটিত বিষয় নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে দুই তরুণ খুন হন। এ ঘটনার পর চট্টগ্রামে কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যমতে, গত ৫ বছরে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে অন্তত অর্ধশত খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের দৌরাত্ম্য কমাতে গত ৪ বছর আগে তালিকা করা হলেও সেটি আর হালনাগাদ করা হয়নি। ফলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে পাড়া-মহল্লার উঠতি বয়সি কিশোররা।

কারণ ছাড়া কোনো কিছু ঘটে না কিংবা উদ্ভব হয় না। কিশোর গ্যাংয়ের বিস্তারও সমাজের কোনো অসঙ্গতি বা ক্ষত থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। এর কিছু আমরা জানি। আবার কিছু ব্যাপার সামাজিক গবেষণার মাধ্য্যমে উদ্ঘাটন জরুরি। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে হিরোইজমের বিষয়টি সব সময় আকর্ষণীয়, এটাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এদের বিপথগামী করছে এমন তথ্য অনেকের জানা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এর জন্য পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় দায়ী। উঠতি বয়সি কিশোরদের মধ্যে সব সময় উদ্দীপনা কাজ করে। ফলে খারাপ দিকে প্রভাবিত হয় বেশি। আবার এমনও অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের কিছু ছাত্র-যুব নেতা, সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর এবং বস্তি এলাকার সন্ত্রাসীরা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে নগরীর ৩০০ স্পটে সক্রিয় থাকা ৫৫০ কিশোর গ্যাং সদস্যের তালিকা করে সিএমপি। তাদের দমাতে শুরু করে অভিযান। অভিযানের মুখে বছরের শেষ দিকে দাপট কিছুটা কমলেও বন্ধ হয়নি কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা। কিন্তু গত ৪ বছরে সেই তালিকা হালনাগাদ হয়নি। অথচ সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নগরীর পাড়া-মহল্লায় প্রতিনিয়ত আধিপত্য বিস্তার এবং হিরোগিরি দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠছে কিশোররা। প্রতি বছর গ্যাংয়ে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সদস্য। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। একের পর এক খুন, মাদক চোরাচালান, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

কিশোরদের অবশ্যই কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য প্রথমেই অভিভাবকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। অর্থাৎ পরিবারের ভূমিকা রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা হালনাগাদ করে তাদের শোধরানো ও নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত