ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কংক্রিটের শহর ঢাকা

সবুজায়নে জোর দিতে হবে
কংক্রিটের শহর ঢাকা

সম্প্রতি রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের গাছ কাটা নিয়ে স্থানীয় নাগরিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে; কিন্তু নাগরিকরা এ যুক্তি মেনে নিতে পারছে না। তারা স্মৃতিবিজড়িত গাছগুলো রেখেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার দাবি জানিয়েছে। পরিতাপের বিষয় হলো, নাগরিক দাবির প্রতি কর্তৃপক্ষের সহমর্মিতা লক্ষ্য করা যায়নি, বরং রাতের অন্ধকারে ধানমন্ডিতে বৃক্ষনিধন অব্যাহত গতিতে চলেছে। এভাবে তিলোত্তমা ও সবুজ ঢাকার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বাস্তবে কংক্রিটের ঢাকায় কমছে সবুজ, বাড়ছে উত্তাপ। কথিত নগর উন্নয়নের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় দিন দিনই বাড়ছে ভবন। অপরিকল্পিতভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও বিভিন্ন প্রকল্পে ভবন তৈরির কারণে কমেছে সবুজ এলাকা ও উন্মুক্ত স্থান। আর এ স্থাপনা নির্মাণে নির্বিচারে কাটা হয়েছে গাছ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নেয়া হয়নি তেমন কার্যকরী উদ্যোগ। এতে সবুজের সমারোহ বিলীন হয়ে ক্রমেই ধূসর হচ্ছে শহর। আর কংক্রিটের ঢাকায় বাড়ছে তাপমাত্রাও। সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঢাকা শহর এমনিতেই বসবাসের অনুপযোগী একটি শহর বিবেচিত হয়ে আসছে। এখন যখন এটিকে মেরামত করে বাসযোগ্য করা দরকার, তখনও আমরা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে চলছি।

এখন ঢাকায় সবুজ এলাকা বলতে বুঝায় মূলত গুটিকয়েক উদ্যান ও পার্ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, চিড়িয়াখানা এলাকা, সংসদ ভবন এলাকা, ধানমন্ডি লেক ও আশপাশের কিছু সবুজ এলাকা। কিন্তু ক্রমেই এসব এলাকাও চলে যাচ্ছে কংক্রিটের দখলে। উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উদ্যানগুলোতে নির্বিচারে গাছ কাটা হয়েছে। উল্লেখ্য, দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ঢাকা শহরের আয়তন প্রায় ৩০৬ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০১৯ সালের এক গবেষণা বলছে, ঢাকায় সবুজ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট আয়তনের ৯ দশমিক ২ শতাংশ। গাছপালা থাকা এলাকার হিসাব করলে এটি আরও অনেক কম হবে। শহরটির মোট আয়তনের মধ্যে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশই কংক্রিট আচ্ছাদিত। বাকি এলাকার মধ্যে ৯ দশমিক ২ শতাংশ সবুজ আচ্ছাদিত, ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান এবং ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ জলাভূমি।

এ গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকায় ১৯৯৯ সালে সবুজ আচ্ছাদন ছিল ৮ দশমিক ৯৭ বর্গকিলোমিটার এলাকায়। ওই বছর রাজধানীর ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ এলাকা বৃক্ষ আচ্ছাদিত ছিল। পরের এক দশকে পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়। ২০০৯ সালে রাজধানীতে সবুজ আচ্ছাদন পাওয়া যায় ১২ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটারজুড়ে। ওই বছর রাজধানীর আয়তনের ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ এলাকায় গাছের উপস্থিতি দেখা যায়। কিন্তু পরের এক দশক পরিস্থিতির অবনতি হয়।

তথ্য অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা ও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাধার থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের ঢাকায় বর্তমানে আট ভাগেরও কম সবুজ এলাকা রয়েছে। আর জলাশয়গুলো দিন দিন দখল হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে এ শহরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছগাছালি ও সবুজ এলাকা না বাড়লে দিন দিন তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থার আশু অবসান হওয়া জরুরি। উন্নয়নের অনুষঙ্গ হিসেবে অবশ্যই সবুজায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ নিয়ে নাগরিক ও কর্তৃপক্ষের সচেতনতা থাকা জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত