ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনিয়ন্ত্রিত নিত্যপণ্যের বাজার

দুর্ভোগে সাধারণ ভোক্তা
অনিয়ন্ত্রিত নিত্যপণ্যের বাজার

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি নাগরিক জীবনে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে। আয় বাড়ছে না বরং প্রতিনিয়ত হুহু করে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। প্রকারন্তালে একশ্রেণির সুবিধবাভোগী এ সুযোগে দুর্বৃত্তপনার দাপট দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে এমনই তথ্য বেরিয়ে আসছে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা জনমনে ক্ষোভ ও হতাশা সঞ্চার করছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য জনগণকে যে কতটা অসহায় করে তুলেছে তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে বলা যায়। তিনি বলেন, মানুষ বাজারে গিয়ে কাঁদছে, কারণ পকেটে টাকা নেই। আর এ অবস্থার একমাত্র কারণ হিসাবে তিনি বাজার সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করেন। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি ও বাজার দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তার বক্তব্য যথাযথ বলেই প্রতীয়মান। এখন নিত্যপণ্যের বাজারে যেন চলছে লুটপাটের মহোৎসব। ক্রমাগত বেড়েই চলেছে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে তেল, চিনি, আলু ও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়লেও মূল্যবৃদ্ধির তালিকায়যুক্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু পণ্য। হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী বেশ কিছু সবজির দামও। আর প্রতিবছর ঈদুল আজহায় মসলার দাম বাড়লেও এবার আগে থেকেই বাড়তি। কিছু পণ্যের দাম রমজান মাসের চেয়েও বেশি।

স্মর্তব্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। অথচ এতদিন সরকার নির্ধারিত পরিশোধিত খোলা চিনির দাম ছিল ১০৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ছিল ১০৯ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ টাকা পকেটে ঢুকিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে বুধবার পরিশোধিত খোলা চিনির দাম প্রতি কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু দাম নির্ধারণের আগেই ২০-৩০ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বলে দেশে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছিল সয়াবিন তেলের দাম। কিন্তু গত ৪ মাস ধরে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে কমানো হয়নি। বরং আরও বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম। প্রত্যাহারকৃত ভ্যাট চালু করায় গত বৃহস্পতিবার দেশের বাজারে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এদিকে বাজারে সরবারহে ঘাটতির কারণেই আলু ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছেন। রমজানের আগে থেকেই অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। একদিনের ব্যবধানে আরও বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। আর ডিমের হালি হয়েছে ৫০ টাকা। এখানেও চলছে ইচ্ছেমতো লুটপাট। কোরবানির বাকি এখনও প্রায় ২ মাস। এরমধ্যেই অস্থির হতে শুরু করেছে মসলার দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এই অবস্থায় নিম্নবিত্ত তো বটে, মধ্যবিত্তের জীবনও হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। জনদুর্ভোগ লাগবে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন এটাই প্রত্যাশা।

নিত্যপণ্যের বাজারে যা ঘটছে তা মূলত মাৎসন্যয়। কিছু লোক সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো মুনাফা লুটছে, অথচ এদের নিবৃত করার তেমন উদ্যোগ লক্ষণীয় নয়। এদের যথেচ্ছাচারে জনগণের জীবনমান নামছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থা সরকার কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত