ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে

বিষয়টি পর্যালোচনা জরুরি
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে

সাধারণ মানুষের সঞ্চয় মানসিকতা গড়ে তুলতে সঞ্চয়পত্রের ভূমিকা রয়েছে, তেমনি সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে রাখে ভূমিকা। অথচ প্রকাশ যে, বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে, কেনার চেয়ে ভাঙছে বেশি। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্র কেনা বা বিনিয়োগে মানুষের আগ্রহ কমেছে। ফলে তলানিতে ঠেকেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) যে টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে তা দিয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করাও সম্ভব হয়নি। বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধেই চলে যাচ্ছে বেশি টাকা। অর্থাৎ কেনার চেয়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ফলে সরকারের কোষাগার থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল শোধ করতে হচ্ছে। এদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তাও হয়নি পূরণ। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাসে এ খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। উল্টো সরকার কোষাগার থেকে ৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকারও বেশি পরিশোধ করেছে। সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপ, মুদ্রাস্ফীতির চাপ, সুদের হার হ্রাস এবং সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা থাকায় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। এ ছাড়া দেশে দীর্ঘ সময় ধরে চলা ডলার সংকট পণ্যের আমদানি মূল্য বাড়িয়েছে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য মানুষকে আগের তুলনায় বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেই খরচ বেড়েছে। এতে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে। উল্লেখ্য, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল গ্রাহকদের পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ২০২২-২৩ এর প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬২ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আর সরকার এ খাতে মোট পরিশোধ করেছে ৬৬ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৯ মাসে আরও ৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার বা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের আরেকটি অভিমত যে, ওই ৯ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে সাধারণ মানুষের কেনার পরিমাণ খুব সামান্য। কারণ সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়পত্র কেনার মতো অর্থ নেই। এর বেশির ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেতাদের দ্বারা কেনা হয়েছিল। বিষয়টি ভাবনার।

তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু ব্যাংকে তারল্য সংকট থাকায় অভ্যন্তরীণ ঋণের পুরোটাই এখন জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে সরকার এমন কিছু শর্তারোপ করেছে, তা কঠিনই বলতে হবে। এতে ধরে নেয়া যায়, সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি নিরুৎসাহিত করছে। কারণ সঞ্চয়পত্রের বদলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সরকারের সুদ খরচ অনেক কম হয়। এতে সরকারের সুবিধা হলেও সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যার। কারণ সঞ্চয়পত্র অনেকের জন্যই আর্থিক স্বস্তি। সংগত কারণেই সঞ্চয়পত্র নিয়ে সরকারের মনোভাব পর্যালোচনা দাবি রাখে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত