ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বন্ধুত্ব দৃঢ় হোক

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, পরিচালক, এফবিসিসিআই
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বন্ধুত্ব দৃঢ় হোক

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুক্রবার ষষ্ঠ ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন চেয়েছেন। দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ ২৫টি দেশের উচ্চপর্যায়ের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।

রোহিঙ্গা সমস্যাকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে তাদের বোঝা টানা আর সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও ভারত মহাসাগর অঞ্চল অবহেলিত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তিনি শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় এ অঞ্চলের দেশগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশগুলো সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে আরও উপকৃত হবে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বর্তমান বিশ্বের ৬০ শতাংশ বাণিজ্য সমুদ্রপথে পরিচালিত হচ্ছে। গত ১৫ বছরে সমুদ্রপথে বাণিজ্য ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রের সম্ভাবনা এখনও অনেকটাই অব্যবহৃত।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য শান্তি, অংশীদারি এবং সমৃদ্ধি’ যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। ভারত মহাসাগরের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব বাণিজ্যে সমুদ্রপথের গুরুত্ব যেমন বাড়ছে, তেমন সমুদ্রসম্পদ বিভিন্ন দেশের সমৃদ্ধির চাবিকাঠিতে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর সংগঠন ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের যাত্রা হয় ২০১৬ সালে। গত ৬ বছরে এটি এ অঞ্চলের দেশগুলোর পরামর্শমূলক ফোরাম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর ২০১৬ সাল থেকে পাঁচটি সম্মেলন হয়েছে। ২০২০ সালে করোনার কারণে সম্মেলন হয়নি। আগের পাঁচটি সম্মেলন হয়েছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ ও আরব আমিরাতে। ঢাকা সম্মেলন এ অঞ্চলের দেশগুলোর নিরাপত্তা এবং সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারের পথ রচনা ও সদস্য দেশগুলোর বন্ধুত্ব জোরদারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখলে তা হবে এক বড় অর্জন।

ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেশ কিছু নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা না গেলে বাণিজ্যের পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। তাই এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমন্বিত ও সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন।

সম্মেলনে বক্তাদের আলোচনায় এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। বক্তারা বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সবপক্ষের জন্য মুক্ত ও উদার ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এটা বাস্তবায়ন করা না গেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যের পাশাপাশি এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে।

অধিবেশনে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের মহাপরিচালক বিজয় ঠাকুর সিং বলেন, এই অঞ্চলে মানবপাচার, চোরাচালান, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্রসম্পদের ক্ষতিসাধন, সমুদ্রপথে নিরাপদে যোগাযোগ ও সাইবার নিরাপত্তার মতো বেশ কিছু বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ অঞ্চলের দেশগুলোর সহযোগিতামূলক ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে বিজয় ঠাকুর সিং বলেন, এর কারণে এ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এ ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সমুদ্রপথ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ পথটি সবার জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ রাখাও একটা চ্যালেঞ্জ।

জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অভিন্ন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোকে একযোগে কাজ করার পরামর্শ দেন বক্তরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ওয়েন্ডি শেরম্যান বলেছেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২৭০ কোটি মানুষ বাস করে যা বিশ্বের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং গড় ৩০ বছর বয়সিদের শতকরা হার শুধু বাড়তে থাকবে। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক তাৎপর্যকে বাড়িয়ে বলার কিছু নেই। ভারত মহাসাগর বিশ্বের পুরো সমুদ্রপৃষ্ঠের এক-পঞ্চমাংশ এবং এটি সারা বিশ্বের মানুষ ও অর্থনীতিকে সংযুক্ত করেছে। এর বিস্তীর্ণ উপকূল রেখার মধ্যে রয়েছে হরমুজ প্রণালি থেকে শুরু করে মালাক্কা প্রণালি পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচল পথ। সারা বিশ্বে সমুদ্রপথে পরিবহনকৃত তেলের চালানের ৮০ শতাংশই ভারত মহাসাগরের জলসীমা অতিক্রম করে থাকে। আমাদের আবাসগ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৎস্যভাণ্ডারও রয়েছে এ অঞ্চলে। সেগুলো এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান ও বিশ্বজুড়ে মানুষের খাবার জোগানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সমুদ্রভিত্তিক টেকসই অর্থনীতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে এর শক্তি বহুগুণ বাড়বে, যার ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কীভাবে একে অপরকে শক্তিশালী করতে পারে তার পথ প্রদর্শন করবে।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি অমিত সম্ভাবনাময়। আমরা এটি করছি কারণ এর পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের জন্য আমাদের সবার একত্রিত হওয়া আবশ্যক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত