ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আগাম মৌসুমি ফল

শামীম আহমেদ, শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
আগাম মৌসুমি ফল

বর্তমানে দেশে ফলের মৌসুম চলছে। প্রায় শতকরা ৬০ শতাংশ ফল গ্রীষ্ম-বর্ষা ঋতুতে হয়। ফলের প্রধান মাস জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়। এ সময়ে বেশি ফল পাওয়া যায়। বিশেষ করে আম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, তরমুজ, পেয়ারা প্রভৃতি। কিন্তু এসব দেশীয় সুস্বাদু ফল পরিপক্ব হওয়ার আগেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লাভের আশায় বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করে ফল পাকাচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকি সম্মুখীন।

সরজমিনে আম বাগানে আম পরিপক্ব না হলেও বাজারে বিভিন্ন জাতের আকর্ষণীয় পাকা আম শোভা পাচ্ছে। অপরিপক্ব আম পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকারক কার্বাইড, ইথোফেন, ইথিকন ও রাইপেন জাতীয় রাসায়নিক। অপরিপক্ব আমের ওপর স্প্রে করে ঢেকে দিলে ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যে আকর্ষণীয় কালার হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ ভোক্তার বোঝায় উপায় নেই এটি কৃত্রিমভাবে পাকানো আম। এতে করে যেমন আমের প্রকৃত স্বাদ ও পুষ্টি থেকে ভোক্তা বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনিভাবে বিভিন্ন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকছে।

তেমনিভাবে লিচু বড় ও আকর্ষণীয় কালার তৈরি করতে লিচুর গুটি থাকতেই জৈব-উজ্জীবক ট্রায়াকন্টানল, ম্যানকোজেব ছিটিয়ে গাছ ভিজিয়ে দেয়া হয়। এর পর ছত্রাকনাশক ল্যাম্বডা সাইহ্যালেথ্রিন প্রয়োগ করার পর ফল একটু বড় হলে নিয়মিত বিরতিতে কার্বেন্ডাজিম ও সাইফারমেথ্রিন নামের কীটনাশক ছিটানো হয়। লিচু রসাল হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকে ম্যানকোজেব, ট্রায়াকন্টানল, বোরন ও হরমোনজাতীয় নানা ওষুধ ছিটানো হয়। এসব না ছিটালে লিচুর রং লাল টকটকে লাল হয়। এ সব রাসায়নিকের সঠিক মাত্রা না জেনেই ইচ্ছামতো ব্যবহার যেন আরও ভয়ংকর অবস্থার দিকে ইংগিত করছে। সাধারণ ক্রেতারা নিশ্চিতে ফলের রং দেখে বিষ কিনে বাড়ি ফিরছেন।

কাঁঠালের ব্যাপারেও ব্যতিক্রম নয়। অপরিপক্ব কাঁঠাল পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম-কার্বাইড, ইথাইড, কপার সালফেট, পটাশের তরল দ্রবণ, কার্বনের ধোঁয়া, রাইপেন জাতীয় রাসায়নিক সরাসরি কাঁঠালের বোঁটা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ১৮-২০ ঘণ্টার মধ্যে অপরিপক্ব কাঁঠাল পেকে মিষ্টি গন্ধ ছড়ায়। সাধারণ ভোক্তার বোঝার উপায় নেই বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ে পাকানো হয়েছে।

এসব রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফল খাওয়ার ফলে, বদহজমি, পেটেরপীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে। শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

নিরাপদ ফল প্রাপ্তিতে সরকারের কঠোর ব্যববস্থা গ্রহণসহ বাজার মনিটরিং, ভোক্তা অধিকারের কার্যক্রম বাড়ানো, জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত