ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

‘মোখা’র হানা

বড় আতঙ্ক, অল্প ক্ষতিতে স্বস্তি
‘মোখা’র হানা

বেশ কয়েকদিন ধরেই চোখ রাঙিয়েছে মোখা। ক্ষণে ক্ষণে বদলিয়েছে গতি। ‘মোখা’ ধাপে ধাপে বাড়িয়েছে শক্তি। বড় আতঙ্কে ছিল উপকূল অঞ্চলের মানুষ, সারাদেশের মানুষের মধ্যে ছিল উৎকণ্ঠা। ঘূর্ণিঝড়টির প্রবল ক্ষমতা দেখে বিশ্বের সব আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাসে বড় ঝুঁকির তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। কেউ কেউ একে সুপারসাইক্লোনও বলেছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার নৌবন্দরকে দেখিয়ে যেতে বলেছিল ১০ নম্বর মহা-বিপৎসংকেত। এমন আভাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপকূলে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে মানুষ ছুটে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে। অবশেষে রোববার শেষ রাতে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ সেন্টমার্টিন স্পর্শ করে। রাতে ঝড়বৃষ্টি হলেও সকালের আলো ফুটতেই উবে যায় সব শঙ্কা। মোখার মূল কেন্দ্র সেন্টমার্টিন থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় মিয়ানমারের দিকে। বাংলাদেশকে বাঁয়ে রেখে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে মিয়ানমারে। সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বলা যায়, বড় বাঁচা বেঁচে গেল বাংলাদেশের উপকূল। তার মানে এই নয় যে, উপকূল একেবারে ক্ষয়ক্ষতিহীন ছিল। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। ১৪৭ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো হাওয়ায় ভেঙে গেছে তিনশ’র অধিক ঘরবাড়ি। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা।

‘মোখা’কে কেন্দ্র করে যে বিষয়টি সামনে চলে এসেছে তা হলো, আবহাওয়া পূর্বাভাসের বিভ্রান্তি। ঘূর্ণিঝড় মোখায় কক্সবাজার জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের একাংশ সাগরে বিলীন হবে- এমন ‘পূর্বাভাস’সহ নানা শঙ্কার কথা ক’দিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। খোদ দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মোখাকে সুপার সাইক্লোন বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে- কবে দুর্যোগের নির্ভুল পূর্বাভাস মিলবে? উল্লেখ্য, মোখার আঁচ বাংলাদেশের টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে লাগলেও ঝড়ের শক্তিশালী কেন্দ্রটি গেছে মিয়ানমারের দিকে। তাই ওই দেশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। কিন্তু প্রকাশ, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর আগের কয়েকদিনে স্পষ্ট করে বলতে পারেনি, মোখার কেন্দ্রস্থল সরাসরি বাংলাদেশের দিকে আসবে কিনা? সংস্থাটি বলেছিল, মোখা বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই দেশের ওপর দিয়েই যাবে। তিন বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ এবং ঢাকায় টানা বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছিল। এগুলো ঠিক ফলেনি। এমনকি ঝড়ের শঙ্কায় ৮০ শতাংশ পাকা ধানকাটা এবং আম পাড়ার পরামর্শও দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম থেকে তরল গ্যাসের জাহাজ সরিয়ে নেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ করা হয়। ঝড়ের পূর্বাভাস না ফলায় স্বস্তি এলেও যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে বলে প্রতীয়মান। কারণ ‘ফলস অ্যালার্মে’র বিপদ হলো ভবিষ্যতে যখন আসলেই বড় বিপদ আসবে, তখন মানুষ সতর্ক হবে না, যা ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাতে পারে।

দৈব-দুর্বিপাকের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে এ দেশের মানুষ শত শত বছর ধরে টিকে আছে। এগুলো মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস অবহিত হওয়ার মাধ্যমে বড় ধরনের দুর্বিপাক মোকাবিলার প্রস্তুতি ও অবকাঠামোর আমাদের রয়েছে। তবে পূর্বাভাস নিয়ে বিভ্রান্তি ঘটলে সমস্যার কারণ হয়। সংগত কারণেই এ নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া জরুরি। এ নিয়ে অবশ্যই আবহাওয়া অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল ভূমিকা রয়েছে। তবে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাক্টিভিস্টদের পূর্বাভাস প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অনভিজ্ঞতার দরুন মনগড়া তথ্য অনেক সময় ভয়াবহ বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে সবাই স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা বজায় রাখবে- এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত