ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অভিমত : ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে

উচ্চ রক্তচাপ কমাই দীর্ঘজীবন বাঁচাই

সুমাইয়া আকতার, শিক্ষার্থী, বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ, [email protected]
উচ্চ রক্তচাপ কমাই দীর্ঘজীবন বাঁচাই

মানবদেহের নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার হিসেবে কাজ করা রোগগুলো নীরবেই শরীরকে ক্ষতি করতে থাকে। একটা সময় গুরুতর হয়ে ওঠে, যা মানুষ সচরাচর বুঝতে পারে না। এমনকি আকস্মিক মৃত্যুর কারন হয়ে ওঠে যার মধ্যে ‘উচ্চ রক্তচাপ’ একটি। হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে রক্ত প্রবাহের চাপ অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যায় তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের রক্তচাপের পরিমাপ ১২০/৮০ মি.মি. পারদচাপ ধরা হয়। রক্তচাপের এই মাত্রা দুটি ভিন্ন দিনে ১৪০/৯০ মি.মি. পারদচাপ বা তার বেশি হয় তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে ধরা হয়। তবে বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপ কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে ১৩০/৮০ মি.মি. পারদচাপের অধিক হলে তা উচ্চ রক্তচাপের পর্যায়ে পড়ে।

প্রতি বছর এক কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যায়, যা সব সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে বিশ্বের ৩০ থেকে ৭৯ বছর বয়সি ১২৮ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, যার দুই-তৃতীয়াংশ বাস করেন নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগ আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

উচ্চরক্তচাপ থেকে মানুষকে সচেতন করতে প্রতি বছর ১৭ মে দিনটিকে ‘ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। ৮৫ দেশের হাইপারটেনশন সোসাইটির সম্মিলিত সংস্থা ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লীগ উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জনগণকে সজাগ করার জন্য দিনটির প্রবর্তন করেছে। সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০১৮’ এর তথ্য বলছে, প্রতি ৫ জনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (২১) উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুস্থতা এবং অকাল মৃত্যুর বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত। আর এই অব্যাহত রাখাটা ধরে না রাখতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (লক্ষ্য ৩.৪) অর্জন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। উচ্চ রক্তচাপের একেবারে সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে সাধারণ কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে-

প্রচণ্ড মাথাব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো, ঘাড় ব্যথা করা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা, রাতে ভালো ঘুম না হওয়া, মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া, অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা। সাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকা ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি রান্নাঘরের ধোঁয়া নির্মূল করা এবং ধোঁয়া সৃষ্টির পরিমাণ কমিয়ে আনার যথেষ্ট কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। কারণ লবণের সোডিয়াম রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্তের আয়তন ও চাপ বেড়ে যায়।

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে। কারণ ধূমপান শরীরে নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে ধমনি ও শিরার নানারকম রোগসহ হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার দিকে বেশ নজর দিতে হবে। শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হৃদযন্ত্রের অতিরিক্ত পরিশ্রম হয়। বেশি ওজনের মানুষের মধ্যে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা যায়।

এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম করা। নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করলে হৃৎপি- সবল থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার ফলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

আমাদের জীবনের সব সমস্যার অন্যতম কারণ মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কম করতে হবে। রাগ, উত্তেজনা, ভীতি অথবা মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ অব্যাহত থাকলে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। মাংস, মাখন বা তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত কোলেস্টোরেলযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণেও রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টোরেল রক্তনালীর দেয়াল মোটা ও শক্ত করে ফেলে। এর ফলেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা যেতে পারে।

এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ হলে অতিরিক্ত কোলেস্টরেল জাতীয় খাবার পরিহার করার পাশাপাশি ফলমূল শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করা একান্তই জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ওষুধ গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপজনিত মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত