ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সড়ক গবেষণাগার

প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে
সড়ক গবেষণাগার

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। বর্তমান সরকার এই নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে এবং ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যা সরকারের সদিচ্ছারই প্রকাশ। তবে পরিতাপের বিষয়, দেশের সড়কগুলোর বেহাল দশা, অতিরিক্ত নির্মাণ ব্যয়, রক্ষণাবেক্ষণের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেন এমন হচ্ছে? যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। নির্মাণের মাত্র এক বছরের মধ্যে ভঙ্গুর হয়ে যায় অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত মহাসড়কটি। আবার জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি চার লেন করতে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২১ কোটি টাকা। একই সমস্যা দেখা দেয় এ সড়কেও। অথচ দুই মহাসড়কই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বানিয়েছিল সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। আর নওগাঁ-বদলগাছী-পত্নীতলা আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়নকাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের জুনে। এতে খরচ হয় ৬৫ কোটি টাকা। উন্নয়নকাজ শেষ হতে না হতেই সড়কটির জায়গায় জায়গায় দেবে যেতে শুরু করে। কোথাও আবার পিচ হয়ে ওঠে ঢেউয়ের মতো (আন্ডুলেশন)। একই সমস্যা দেখা দেয় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পত্নীতলা-সাপাহার-রহনপুর আঞ্চলিক মহাসড়কেও। এই নজির পত্রিকান্তরে প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা এ দেশে নতুন নয়। এতে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ অপচয় হচ্ছে। অথচ সড়ক নিয়ে গবেষণা, মানোন্নয়ন বা এগুলো রক্ষার জন্য দেশে একটি পুরোনো গবেষণাগার রয়েছে। পুরো নাম ‘বাংলাদেশ সড়ক গবেষণাগার-বিআরআরএল’। নির্মাণের এত অল্প

সময়েই সড়কের এমন বেহাল অবস্থা হওয়ায় তাদের কাজ ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের টোলারবাগ এলাকায় ১৯৬৫ সালে ৪৪ একর জমিতে এ গবেষণাগার নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর গবেষণা খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হলেও দীর্ঘ পথপরিক্রমায় এ প্রতিষ্ঠানের অর্জন আশানুরূপ নয়। অবাক করা বিষয়, গবেষণার এ প্রতিষ্ঠানে কোনো গবেষক নেই। মূলত পরীক্ষাগার হিসেবে কাজ হয় এখানে। গবেষণার জন্য যা বরাদ্দ হয়, পুরোটাই ব্যয় হয় নমুনা পরীক্ষা, ল্যাব পরিচালনাসহ যন্ত্রপাতি কেনায়। ল্যাব পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন পরীক্ষকরাই। আছেন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা নির্মাণ উপকরণের নামমাত্র পরীক্ষা হয় এখানে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা ৯টি ল্যাবের চিত্রও এক। এসব গবেষণাগারে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের বেশিরভাগই এটিকে অপ্রয়োজনীয় বা ডাম্পিং পোস্টিং মনে করেন। ফলে পদায়নের পর থেকেই তারা বদলির অপেক্ষায় থাকেন। সহযোগী পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য আমরা অবহিত হয়েছি। বাস্তবে দেশে অনেক গবেষণাগার থাকলেও এটির বিষয় কম লোকই জানেন। এমনকি স্থানীয় লোকজনও প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে অবগত নন। গবেষণাকেন্দ্রটিতে অনেকটা ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। অথচ বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই প্রতিষ্ঠানটির সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি বলে প্রতীয়মান। লক্ষ্য ছিল সওজ ছাড়াও সারা দেশের সড়কের মান নিয়ন্ত্রণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছরে এটি সারা দেশ তো দূরের কথা, নিজের প্রতিষ্ঠান সওজের সড়কের মানই নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারছে না। গবেষক না থাকায় নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন বা সড়ক-সেতু রক্ষায় ব্যতিক্রমী কোনো ভূমিকাও নেই। উল্টো অন্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে চলছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান।

দেশে যে সড়ক নেটওয়ার্ক বিদ্যমান এবং নতুন সড়ক নির্মাণ চলমান- এই অবস্থায় অবশ্যই সড়ক গবেষণাগারের ভূমিকা রাখার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। সড়ক হতে হবে টেকসই এবং সাশ্রয়ী। যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটিতে সত্যিকারের গবেষণা প্রয়োজন। এই জন্য গবেষণাগারটির সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে- এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত