ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লোডশেডিং-গ্যাস সংকট

ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে
লোডশেডিং-গ্যাস সংকট

সারা দেশে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সঙ্গে গ্যাসের সংকটও রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ঘরে চুলা জ্বলছে নিবু নিবু করে। কোথাও আবার একেবারে জ্বলছে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। অনেক দিন ধরেই গ্রামে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। ইদানীং শহরের অবস্থাও তদ্রুপ। অসহ্য গরমে নাভিশ্বাস জনজীবন। পাশাপাশি গ্যাসের চাপ কম থাকায় অনেক কারখানা চালু করাই সম্ভব হয়নি। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও একই অবস্থা। সিএনজি স্টেশনে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তথ্য অনুযায়ী, রাতের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম থাকা সত্ত্বেও দিনের বেলায় শুধু ঢাকাতেই ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে। সারা দেশে সাড়ে ৩ হাজারের ওপরে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। যেখানে চাহিদা ১৩ হাজারের মতো বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ফলে সারা দেশের গ্রাহকরা দিনের বিভিন্ন সময়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছেন। পিডিবির কর্মকর্তার বরাতে প্রকাশ, সন্ধ্যার পর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য গ্যাস সংকটকে দায়ী করা হয়। উল্লেখ্য, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদনে সমস্যা হয় বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়। রাজধানী ঢাকাতেও বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি দুর্ভোগে ফেলে মানুষকে। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সৃষ্ট বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দু’দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। গ্যাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বেশি সময় লাগবে। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি সহসা হবে বলে মনে হয় না।

অন্য খাতের মতো বিদ্যুতেও ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে। শুধু যে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে বিদুৎ-গ্যাস সংকট তা বলা যাবে না। এটি একটি আপৎকালীন সমস্যা ছিল। সূত্রমতে, ডলারের অভাবে জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছিল না। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই এই সমস্যা এখনো বিদ্যমান। ফলে জ্বালানির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছিল না। যে কারণে রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সব জায়গায় কমবেশি লোডশেডিং ছিল। এখন আরও তীব্র হয়েছে। রাজধানীতেই গত দু’দিন ধরে প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। আর শিগগির এই পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। অন্যদিকে গ্যাসের সংকট মেটাতে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে এলএনজি আমদানি করে; কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে গত ১২ মে রাত ১১টা থেকে গভীর সমুদ্রে ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় গ্যাসের তীব্র সংকট তৈরি হয়। এই গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রাম, মেঘনাঘাট, হরিপুর ও সিদ্ধিরগঞ্জে থাকা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেগুলোর উৎপাদন একেবারে নিচে নেমে আসে। আশা করা যায়, কেন্দ্রগুলো চালু হলে সমস্যার আপাতত সমাধান হবে। তবে স্থায়ী সমাধান ঘটবে কি-না তা নিয়ে যথারীতি সমস্যা রয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড সক্ষমতার মধ্যেও দেশজুড়ে দিনে-রাতে সব সময়ই বিদ্যুৎ যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে দিনে-রাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিং ঘটছে। অনেক গ্রামে রাতে বিদ্যুৎ থাকেই না। এ বিষয়টি অবশ্যই পরিতাপের। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতিও সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। বিশেষ করে ডলার সংকটের সর্বগ্রাসী প্রভাব সর্বত্র ভোগান্তি তৈরি করছে। তবে বিদ্যুৎ-গ্যাস তথা জ¦ালানি খাতে অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও অনিয়মের বিষয়টিকেও কেউ কেউ সংকটের জন্য ইংগিত করেন। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই আমাদের জ¦ালানি নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতার পাশাপাশি যথাযথ উৎপাদন সক্ষমতার কথাও ভাবতে হবে। সর্বোপরি গ্যাস-বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। আশা করা যায়, শিগগির গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট আর থাকবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত