ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঝুঁকিতে পোশাক খাত

বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার করতে হবে
ঝুঁকিতে পোশাক খাত

দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতে বিরাজমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে প্রধান রপ্তানি বাজারে পণ্য যাওয়া কমেছে। স্পষ্টত, করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নতুন করে সংকটের মুখে পড়ে দেশের তৈরি পোশাক খাত। সংকটের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন গার্মেন্ট মালিকরা। কিন্তু কিছুতেই যেন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা এই খাতটি। কমেই চলেছে ক্রয়াদেশ। তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্রয়াদেশ কমেছে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। অর্ডার না থাকায় এবং আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট অনেক কারখানা। বেকার হয়ে পড়ছেন অনেক শ্রমিক। মুখ্যত, ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রভাবেই নতুন কার্যাদেশ কমছে বলে দাবি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর। প্রকাশ, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার পেলেও মাঝারি বা ছোট আকারের প্রতিষ্ঠানগুলো অর্ডার পাচ্ছে না একদমই। ফলে এ ধরনের কারখানাগুলোকে ভুগতে হচ্ছে বেশি। কোনো কোনো কারখানা উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক অর্ডারও পাচ্ছে না। লোকসানি ও রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে অনেক কারখানা। পরিস্থিতি কবে নাগাদ ভালো হবে সেটিও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে পোশাকশিল্পের ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে এমনটাই মনে করছেন শিল্প মালিকরা।

এদিকে সংশ্লিষ্টদের দাবি, চলতি বছর প্রায় ৩০০ কারখানা বন্ধ হয়েছে। চাকরি হারিয়েছেন ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক। বন্ধের পথে আরও বেশ কয়েকটি কারখানা। বাংলাদেশ শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ অর্থাৎ প্রথম তিন মাসে দেশের মোট ৯৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলো বন্ধ হওয়ার কারণে ২০ হাজার ২৭৬ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১৭টি কারখানায় ৬ হাজার ৬৪৭ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বিকেএমইএর সাত কারখানায় ১ হাজার ৪৮৬ জন, বিটিএমইএর তিন কারখানায় ২ হাজার ৮৭ জন, বেপজার দুই কারখানায় ২ হাজার ৪৫ জন শ্রমিক বেকার হয়েছেন। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরও সারা দেশে ৫১০টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। আবার এমন তথ্যও রয়েছে, ক্রয়াদেশ না পাওয়া ছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষের কারণেও অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রোজার ঈদের আগে ও পরে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানায় বেতন না পাওয়ায় আন্দোলনও করেন শ্রমিকরা। সহজেই অনুমেয়, পোশাক খাতের পরিস্থিতি সুবিধার নয়। আর এ অবস্থায় অব্যাহত থাকলেও অর্থনীতির জন্য শঙ্কার কারণ হবে।

পোশাকশিল্প শুধু প্রধান রপ্তানি খাত নয়, দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের আশ্রয়। নারী কর্মীদের বড় অংশই এখানে নিয়োজিত। সুতরাং এই খাতের অবদান ও প্রভাব ব্যাপক। সংগত কারণেই পরিস্থিতি উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু আমেরিকা-ইউরোপের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিকল্প রপ্তানি বাজার খুঁজতে হবে। সেটা অবশ্য সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই নতুন বাজার সন্ধানের পাশাপাশি আমেরিকা-ইউরোপে বাণিজ্য কূটনীতি জোরদারের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে হবে। কোরিয়া, জাপান, ভারতসহ বন্ধুপ্রতিম দেশে বাণিজ্য অংশীদারিত্ব বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পোশাক শিল্পের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারের অব্যাহত সহায়তার দরকার আছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সম্মিলিত কর্মপন্থা জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত