ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস

জনসাধারণের যা করণীয়

আসাদুজ্জামান চৌধুরী সম্রাট
জনসাধারণের যা করণীয়

বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এদেশে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাধারণত প্রায়ই স্বাভাবিক জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলে। সেগুলো হলো- বন্যা, টর্নেডো, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, খরা, ভূমিকম্প, বজ্রপাত ও পাহাড় ধস। এসবের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়ে আসে সাইক্লোন বা সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এর ফলে প্রায়ই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি বহন করতে হয় উপকূলীয় মানুষদের। ঘূর্ণিঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়া এটিকে কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের আগে, চলাকালীন এবং পরে সাধারণ জনগণ যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করলে অনেক ক্ষেত্রে এর দ্বারা সংগঠিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহুলাংশে কমানো সম্ভব। এই প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো সাধারণত ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হওয়ার আগে, চলাকালীন এবং পরে করা উচিত।

ঘূর্ণিঝড়ের আগে সব জনগণকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগাম সতর্কতাগুলো মেনে চলতে হবে। সব ধরনের গুজব তথ্য এড়িয়ে চলতে হবে এবং কোনো অবস্থাতে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়া যাবে না। ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থার সর্বশেষ সঠিক বার্তা জানার জন্য রেডিও শুনতে হবে, টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত চোখ রাখা উচিত। একইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ও গতিবিধি সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকাও পড়া উচিত। দুর্যোগকালীন যোগাযোগ ব্যবস্থা সুনিশ্চিতের জন্য বাড়ির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে পর্যাপ্ত চার্জ এবং রিচার্জ করে রাখা উচিত। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে নিকটস্থ অরক্ষিত বেড়িবাঁধ থাকলে তা স্থানীয় প্রতিনিধির নেতৃত্বে দ্রুত মেরামত ও সংস্কার করতে হবে। সব জেলেদের উচিত নদী ও সাগরে মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং ফিশিং বোটগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের সাইক্লোনের আগে মাঠের সব ফসল ঘরে তুলে আনা উচিত। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য সবার বাড়িতে ফার্স্ট এইড বাক্স ক্রয় করে রাখতে হবে। পাশাপাশি জলোচ্ছ্বাসের ফলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহে রাখতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট তীব্র বাতাস থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের চৌচালা-আটচালা খড় ও টিনের বাড়িগুলোকে সুরক্ষার জন্য বাড়ির উপরিভাগের চারদিকে শক্ত দড়ি দিয়ে মাটির সঙ্গে খুঁটি পুতে বেঁধে রাখতে হবে। যাদের বাড়ি ঘূর্ণিঝড়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত তাদের বিপদসংকেত শোনার সঙ্গে সঙ্গে সপরিবারের নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে কাছের আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হবে।

ঘূর্ণিঝড় চলাকালীনও আমাদের বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সব বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং গ্যাসলাইন বন্ধ রাখতে হবে। গৃহের বাইরে যাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে এবং সব দরজা ও জানালা বন্ধ করে রাখতে হবে। বড় গাছ বা বিদ্যুতের খুঁটির নিচে দাঁড়ানো একেবারেই উচিত নয়। আবহাওয়ার সর্বশেষ বার্তা অবগতির জন্য রেডিও, টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজর রাখতে হবে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের পরেও জনসাধারণকে বেশকিছু বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন- তীব্র জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে খাবার পানির সংকট দেখা দিলে পানিতে ফিটকিরি দিয়ে ফুটিয়ে খেতে হবে। রাস্তাঘাটে ছিড়ে পড়ে থাকা বিদ্যুতিক ক্যাবলে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রদানকৃত ত্রাণসামগ্রী দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে উর্পযুক্ত করণীয়গুলোর মাধ্যমে দেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সাধারণ জনগণ সব ধরনের সাইক্লোন বা সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিগুলো অনেকাংশে প্রশমিত করতে পারবে।

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত