ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সময়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি

ফাইরুজ নাহিয়ান
সময়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি

ইংরেজি ‘প্রোকাস্টিনেশন’ এর বাংলা অর্থ ‘গড়িমসি’ বা, ‘দীর্ঘসূত্রতা’। অর্থাৎ কোনো কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা। বর্তমান সময়ে গড়িমসি করা এমন একটি মারাত্মক সমস্যায় পরিণত হয়েছে, যেটার ব্যাপারে আমরা প্রায় সবাই উদাসীন। নিজের মধ্যকার সৃজন ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে কাজেকর্মে গড়িমসি অবশ্যই পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। বেশিরভাগ সময় আমরা কোনো একটি কাজ দীর্ঘদিন করে করব করব করে ভাবতে থাকি; কিন্তু করা হয়ে ওঠে না। তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে গড়িমসি করার সমস্যা বর্তমানে তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য পেশাজীবী শ্রেণির মানুষের মধ্যেও গড়িমসির সমস্যা দেখা যায়। প্রোকাস্টিনেশনের ওপর বিভিন্ন সময় নানা গবেষণা এবং জরিপ পরিচালিত হয়েছে। সিমন ফ্রাসের ইউনিভার্সিটির গবেষক জেনিফার লেভয়ের পরিচালিত জরিপে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ৩০৮ জন অংশগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে ১৯৮ জন নারী ছিলেন। জরিপের ফলাফলে দেখা যায় ৫০.৭ শতাংশ ইন্টারনেটে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন কাজে গড়িমসি করেন। অংশগ্রহণকারীরা অনলাইনে দেয়া সময়ের গড়ে ৪৭ শতাংশ সময় প্রোকাস্টিনেশন করে থাকেন। এছাড়া ২০০৭ সালে ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির সাইকোলোজিস্ট ডিয়ানে এম টাইস এবং রয় এফ বমিস্টার দ্বারা পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায় সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক কম স্ট্রেস এবং কম অসুস্থতার সম্মুখীন হন ফলে এসময় তাদের মাঝে গড়িমসি করার প্রবণতা কম দেখা দেয়। যতই সেমিস্টার সমাপ্তির দিকে এগোয়, ততই তাদের মাঝে উদ্বিগ্নতা বেড়ে যেতে থাকে, যা তাদের কাজে কর্মে দীর্ঘসূত্রতার দিকে পরিচালিত করে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আমরা এ সমস্যা কীভাবে পরিত্যাগ করব? এর সব চেয়ে বড় উত্তর হলো নিজ উদ্যোগে উদ্যমী হওয়া। আপনি নিজে যদি চেষ্টা না করেন আপনার গড়িমসি করার সমস্যা কেউই সমাধান করতে পারবেন না। পাশাপাশি উদ্বিগ্নতা এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। হতাশা থেকে দূরে থাকার জন্য মানসিকভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। জীবনযাত্রায় ব্যর্থতার সম্মুখীন হলেই হতাশাগ্রস্ত হওয়া যাবে না, বরং এসব ব্যর্থতাকে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা গড়তে হবে। যেকোনো কাজ শেষ করতে চাইলে, অবশ্যই এর শুরু করতে হবে। মনে রাখবেন, যেকোনো কাজের শুরুটাই সব সময় কঠিন হয়। একবার কাজ শুরু করলে সেটা শেষ করা অনেকটাই সহজ হয়ে পড়ে।

মাঝেমধ্যে কাজে সামান্য বিরতি দেয়া যায়, তবে সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন বিরতিটা দীর্ঘ সময়ের জন্য না হয়ে যায়। কারণ, দীর্ঘ সময়ের বিরতি আপনার মধ্যে জড়তা এনে দিতে পারে। তখন নতুন উদ্যোগে আবার জড়তা কাটানোর চেষ্টায় সময় নষ্ট হবে। আবার, আমরা দেখতে পাই সেসব কাজেই গড়িমসি করা হয়, যেসব কাজ করার আমাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন থাকে না। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের কাজগুলো আমরা সহজেই করতে পারি যা অন্যান্য সাধারণ কাজের বেলায় হয়ে ওঠে না। তাই আমাদের ব্যস্ততার মাঝেই সময় বের করে নিতে হবে, সাধারণ কাজেগুলোর জন্য। তাছাড়া আমরা রুটিন বানিয়ে নিতে পারি কাজগুলো সহজে সম্পন্ন করার জন্য। রুটিন বলতে আমরা মনে করি, একেবারে কঠোরভাবে সময় মেপে চলা। কিন্তু আমাদের অবশ্যই এ কথা মনে রাখতে হবে অনমনীয়, দৃঢ় সময়সূচি আমাদের খুব একটা উপকার বয়ে আনবে না। আমাদের এমন রুটিন বেছে নিতে হবে যা দ্বারা আমাদের উপকার হবে। একইসঙ্গে নমনীয় এবং কর্মসম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত সময়সম্পন্ন রুটিন আমাদের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। গড়িমসি সমস্যার সমাধান করা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা এ সমস্যার বেশি সম্মুখীন হয়। তাই, এখনই সময় আমাদের সচেতন হওয়ার আর এ মানসিক সমস্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। আমাদের মনে রাখতে হবে এই সমস্যার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করতে হলে আমরা নিজেরা ছাড়া আর কেউই আমাদের সাহায্য করতে পারবে না।

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত