ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নীরব মহামারি

উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি
নীরব মহামারি

শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বব্যাপী উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। এটি এমন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়েছে যে, পৃথিবীব্যাপী ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। এবার ১৭ মে পালিত দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছিল- ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন।’ রোগটি ভয়াবহ হলেও পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে অনেকেই এই নিয়ে সচেতন নয়। উল্লেখ্য, উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যা অকালমৃত্যু ঘটায়। বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি বাংলাদেশ নীরব মহামারির মধ্যে রয়েছে। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে অনুযায়ী দেশে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ২১ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুস্থতার বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে এনসিডি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত অকালমৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় থাকবে। রক্তচাপ যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেড়ে যায়, তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের রক্তচাপের পরিমাপ ১২০/৮০ মি.মি. পারদচাপ ধরা হয়ে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস যেমন- খাদ্যের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ (সোডিয়াম) গ্রহণ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার এবং তামাক, অ্যালকোহল সেবন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে থাকে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। যেমন- শারীরিকভাবে কর্মঠ না থাকা, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি না খাওয়া। লক্ষণীয় যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগটির নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে না। রোগী বুঝতেই পারে না যে, তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এজন্য উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সকালের দিকে মাথাব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, হৃৎপিণ্ডের অনিয়মিত ছন্দ, দৃষ্টিতে পরিবর্তন এবং কানে গুঞ্জনের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা না হলে, এটি ধমনি এবং মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। ধমনি শক্ত হয়ে হৃৎপিণ্ডে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে। ফলে বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা, হার্ট অ্যাটাক, হার্টফেইল এবং হার্টবিট অনিয়মিত হতে পারে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ অর্থাৎ স্ট্রোক এমনকি বিকল হতে পারে।

পর্যবেক্ষণে বলা যায়, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ রক্তচাপ জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যৌক্তিক কারণেই এ নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ সবশেষ বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে দেখা গেছে, ১৮ বছরের বেশি বয়সি ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ২০৩০ সাল নাগাদ গিয়ে দাঁড়াবে ৩ কোটি ৮০ লাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে ৭৬ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে গাইডলাইন রয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবিলা করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত