ঢাকা ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তীব্র দাবদাহে প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং আমাদের করণীয়

আলকামা সিকদার, সাংবাদিক ও কলাম লেখক, [email protected]
তীব্র দাবদাহে প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং আমাদের করণীয়

তীব্র দাবদাহের ফলে এবং প্রকৃতি ও পরিবেশের মাঝে আজ মানুষের অত্যাচারে প্রকৃতি দারুণভাবে রুদ্ররূপ ধারণ করেছে! অবাধে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, বনধ্বংস আর পাহাড় কাটার ফলেই প্রকৃতি ক্ষেপে ওঠেছে ব্যাপকভাবে! প্রকৃতির এ রুদ্র আচরণ থেকে আমাদের পরিত্রাণের জন্য ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা অতিব জরুরি। তাহলেই হয়তো প্রকৃতি পাবে আপন পরিবেশ। দাবদাহ কমে আসবে ভূমন্ডল থেকে। খাদ্য, জ্বালানি, আসবাবপত্র তৈরি, গৃহনির্মাণ, ওষুধ, সৌন্দর্যায়ন প্রকৃতির জন্য আমরা গাছ লাগাই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, গাছ থেকে নির্গত অক্সিজেন আমরা বেঁচে থাকার জন্য গ্রহণ করি।

আমরা জানি, কোনো দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অন্ততপক্ষে ২৫ শতাংশ ভূমিতে বনজঙ্গল থাকা দরকার। সেই তুলনায় বাংলাদেশে গাছ নিধন ও নির্বচারে বন ধ্বংসের কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে বনভূমি নেই। গত বছরে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) বনবিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। তবে এটা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এ তথ্য মানতে নারাজ। মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশের মোট আয়তনের ১৭ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর লেশ মাত্রও খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

সত্যি যদি এমনটাই হতো, তাহলে আজকে বাংলাদেশের পরিবেশ এতটা ঘোলাটে কিংবা দাবদাহ পরিলক্ষিত হতো না । আর এ জন্য আমাদের গাছ অবাধে কর্তন ও নির্বচারে বন ধ্বংস কেই দায়ী করা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির লীলাভূমি টিলা ও পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে একশ্রেণির অসাধু ভূমিখোররা।

বেশ কিছুদিন ধরে দেশে তীব্র দাবদাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিছু দিন পর পর সামান্য বৃষ্টি হলেও তা যৎ সামান্য। যেটাতে গরমের তীব্রতা কমে না বরং আরও বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে ওঠে আরও অসহনীয়। দাবদাহের এ তীব্রতার কারণে দিনকে দিন সারা বিশ্বের তাপমাত্রা আরও বেরেই চলেছে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। ৫৮ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এ বছর।

তাপমাত্রা এ বৃদ্ধির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের মতো জনবহুল শহরগুলোতে এর মাত্রা আরও বেশি। আর এর প্রতিক্রিয়া বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে- নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের মাঝে।

তীব্র এ গরমের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে কর্মজীবী মানুষও। শিশুরা পরেছে গরম থেকে ঠান্ডাজনিত নানা রোগের কবলে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে এর প্রভাব পরেছে তাকালেই তা বোঝা যায়। এছাড়াও বেড়েছে নানা সব জটিল রোগ।

পরিবেশের ধ্বংসর ও অস্বাভাবিক হারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছে, অধিক হারে অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্প কারখানা স্থাপন, যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন, পাহাড় কাটা, ইটভাটাগুলোতে অবাধে বনের গাছ কেটে পোড়ানো হচ্ছে। এর কারণে একাধারে যেমন বায়ু ও পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে, তেমনি বনের গাছ কেটে বন ও জীববৈচিত্র্যকেও ধ্বংস করা হচ্ছে। এছাড়াও বিষাক্ত গ্যাস কার্বণডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ, ক্লোরো ফ্লোরো গ্যাস নিঃসরণ, অধিক হারে গাছ কর্তন, নির্বিচারে বন নিধনসহ পরিবেশের রক্ষা কবচ বিভিন্ন উপাদান যেমন নির্বিচারে বিভিন্ন পশু-পাখিকে হত্যা করা।

আর এ সব রক্ষায় যদি এখনি কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে তাহলে আমাদের এ পৃথিবীতে বসবাস করা খুবই মুশকিল হয়ে পরবে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বৃক্ষরাজি শব্দদূষণ ও পরিবেশ দূষণ রোধ করে। এক হেক্টর পরিমাণ মাঝারি বন ১০ ডেসিবল শব্দ হ্রাস করতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ও বিভিন্ন উন্নয়নকাজে বনের জমি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই সরকারের উচিৎ বর্তমানে বনভূমি রক্ষা করার পাশাপাশি বনের বাইরে বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের ভাসাম্য ফিরিয়ে আনা অতিব জরুরি।

তাছাড়া আরও বলা হচ্ছে, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে অতিমাত্রায় কার্বণ নিঃসরণ-এর ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে বরফ গলতে শুরু করেছে। এ ছাড়া কার্বণডাই অক্সাইডের মাত্র বেশি হওয়ার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরও একটা অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে ।

গাছ পৃথিবীর এ ক্ষতিকর কার্বণডাই অক্সাইড শোষণ করে, অক্সিজেন নিঃসরণ করবে। যার ফলে তাপমাত্র বৃদ্ধি কিছুটা ধীর গতি হয় এবং বরফ গলা কমে আসবে। তাই এখন অতিব জরুরি আমাদের এ অক্রিজেন ফ্যাক্টরীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদেরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। না হলে পৃথিবীটাকে একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তাই পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই আমাদের গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। কেননা, অনেক প্রাণী গাছ খেয়ে বেঁচে থাকে, আবার গাছই তাদের একমাত্র আবাসস্থল। বন উজাড়ের কারণে এসব প্রাণী যেমন তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারছে না, তেমনি আবাসহীন হয়ে পড়ছে। ফলে এসব প্রাণী দিনকে দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বন উজারের দরুণ নানা জাতের গাছগাছালি, নানা জাতের প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে।

তাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষার্থে গা ছনিধন বন্ধ করতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ এবং কঠোর আইন প্রণয়ন ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া একান্ত প্রয়োজন। সেই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অক্সিজেন ফ্যাক্টরি গাছলাগাতে জনগণকে দারুণভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা জোগাতে সরকারি-বেসরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতিব জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। তাহলেই হয়তো পরিবেশ রক্ষা পাবে, আমাদের এ ধ্বংস লীলা থেকে। সঙ্গে সঙ্গে রক্ষা পাব আমরা মানব জাতি, পরিবেশের সঙ্গে মিশে থাকা বিভিন্ন প্রাণিকুল। কমে আসবে পৃথিবী থেকে তীব্র এ দাবদাহ। বাড়বে অক্সিজেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত