ঢাকা ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দারিদ্র্য বিমোচন

বৈষম্য নিরসনে ব্যবস্থা নিতে হবে
দারিদ্র্য বিমোচন

করোনা সংক্রমণের অভিঘাতে দেশে দরিদ্রজনের সংখ্যা বাড়ছে, এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত জরিপেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তবে সংখ্যাগত হেরফের রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির সময় দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। পরে সেটি ধীরে ধীরে কমে আসে। তবে করোনার কারণে শহরের সমাজে নতুন দারিদ্র্যের আবির্ভাব ঘটেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে ১৮.৭ শতাংশ যে দারিদ্র্য হারের কথা বলা হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক বা ৯ শতাংশের মতো নতুন দরিদ্র হয়েছে। সরকারি হিসাবে দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ, অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ মহামারির ধাক্কায় অধঃপতিত হয়েছে। আর সব মিলে প্রায় ৩ কোটি দরিদ্র মানুষ রয়েছে দেশে। এটি সরকারি হিসাবের তথ্য। সংখ্যাটি বিপুল। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে এত সংখ্যক নাগরিকও নেই। সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিআইডিএস রিসার্চ অ্যালমানাক ২০২৩ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্যটি হলো, মোট দরিদ্রের প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন দরিদ্র। যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছে। সংকটে থাকা এ শ্রেণির ওপর আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। বিআইডিএস প্রধান বলেন, তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩.৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারি চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে। শিক্ষা ও মানবিক পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে শহরের দরিদ্র শ্রেণি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানানো হয়। তাদের শিক্ষায় ফেরাতে বিশেষ শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি চালু করারও পরামর্শ দেয়া হয়। মহামারির ধাক্কায় অনেক মানুষ আত্মকর্মসংস্থানে ঝুঁকেছে বলেও বিআইডিএসের সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বলা হয়, কোভিডের আগে থেকে যাদের আর্থিক সমস্যা ছিল এবং যাদের কাছে দুঃসময়ের জন্য অর্থ জমা ছিল, তারাই এ সুবিধাটা নিয়েছেন। তা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস আত্তিকরণ দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। ওই সময় বেসরকারি এবং সরকারি, দু’পক্ষই নিজস্ব উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থায়ন করেছে। এতে তথ্যপ্রযুক্তি এবং কৃষি সম্প্রসারণ প্রযুক্তি কাজে দিয়েছে। বিবিএসের সর্বশেষ জরিপের প্রসঙ্গটি টেনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সম্পদ যখন সৃষ্টি হয়, তখন বৈষম্য অবধারিত। তিনি আরও বলেন, এই বৈষম্য আমাদেরই সৃষ্টি। মন্ত্রীর উক্তি যথাযথই বলতে হবে। সংকট উত্তরণে তাই যথার্থই পথ অনুসন্ধান করতে হবে।

সরকারি সংস্থা বিবিএস এবং বিআইডিএসের গবেষণার ফলাফল বৈচিত্র্যময় তথ্যের সমাবেশ ঘটেছে। এর মাধ্যমে দারিদ্র্যের প্রকৃতি, নতুন দরিদ্রের হার এবং সমাধানের উপায়ের ইংগিত রয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, চরম প্রতিকূল অবস্থায়ও মানুষ নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার যথাযথ প্রয়াস চালিয়েছে। এ প্রাণশক্তিকে সরকারি সহায়তার মাধ্যমে আরও ইতিবাচক ধারায় আনা গেলে দারিদ্র্যের হার আরও কমবে বলে মনে হয়। সে জন্য কর্মসংস্থানমুখী পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সরকার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার মতো ভাতা দিচ্ছে, যা উৎসাহব্যঞ্জক। তবে সমতাভিত্তিক সুযোগ নিশ্চিত করে বৈষম্য কমানোই হবে উত্তম। পাশাপাশি নতুন দরিদ্রদের জন্য সরকারের (টিসিবির) পারিবারিক কার্ড দেয়াসহ অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত