ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পেঁয়াজের দামে ঝাঁজ

জনস্বার্থ বিবেচনায় পদক্ষেপ নেয়া হোক
পেঁয়াজের দামে ঝাঁজ

দেশে এবার চাহিদার তুলনায় বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে; কিন্তু তারপরও হঠাৎ পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যই বলছে, বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে তা ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে। ১৫ থেকে ২০ দিন আগে রান্নার অন্যতম প্রধান এ উপকরণটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় পাওয়া যেত। মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে; সরকারও পড়েছে বেশ অস্বস্তিতে। এমনিতেই বাজারে সব জিনিসের দামে আগুন। এক কেজি কাঁচা পেঁপে কিনতে হাতে গুনে ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে। ৮০ টাকার কমে কোনো সবজি মিলছে না। ডিমের ডজন ফের ১৫০ টাকা ছুঁয়েছে। এর মধ্যে দেশে নতুন পেঁয়াজ ওঠার মৌসুম শেষ হতে না হতেই লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে বলে মনে হয় না। উল্লেখ্য, সরকারি হিসাবে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এবার উৎপাদন ৩৪ লাখ টনের কাছাকাছি, যা বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বেশি। অবশ্য পেঁয়াজ পচনশীল এবং সংরক্ষণকালে কিছু নষ্ট হয়, ওজনও কমে। আবার কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ রাখতে হয় বীজের জন্য। তারপরও এভাবে দাম বাড়া কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এটা স্পষ্ট যে, পেঁয়াজের এই ঊর্ধ্বমূল্য কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী কিছুদিন পরপর একেক পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। অতীতে এমনও বেশ কিছু ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। অনেকের বিশেষ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে থাকে। যেমন ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় উঠে যায়। এর পর সপ্তাহ না হতেই দাম বেড়ে আড়াইশ’ টাকায় উঠে যায় পেঁয়াজের কেজি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওটাই ছিল পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দর। এবার দাম বাড়ার পেছনে ঘূর্ণিঝড় মোখাকে অবশ্য কেউ দায় দেয়নি, এটা একান্তভাবেই মানবসৃষ্ট ঘটনা বলে প্রতীয়মান। অথচ পেঁয়াজের এই দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদনকারী কৃষকের কোনো বাড়তি লাভ নেই। প্রকাশ, কৃষি বিভাগের হিসাবে এবার পেঁয়াজের কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে ২৮ টাকার মতো। ভারতে উৎপাদন খরচ হয় আরও কম। এ কারণে দাম ধরে রাখতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু আমদানি বন্ধের খবরে পেঁয়াজ উঠতে না উঠতে এমন দর বৃদ্ধি এর আগে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা এর পেছনে মজুতদারিকে দায়ী করেছেন।

তথ্য অনুযায়ী, অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পত্রিকান্তরে জানা যায়, পেঁয়াজ আমদানির পর পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। হয়তো কিছু দিন পর আরও কমবে। এ থেকে স্পষ্ট, দাম বাড়ার বিষয়টি ছিল কৃত্রিম। অন্য নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যেও কমবেশি এমনই ঘটেছে বলা যায়। একটি চক্র কারসাজি করেই চলছে। করোনা সংক্রমণকালেও এরা অসাধু কর্ম থেকে বিরত হয়নি। এতে কথিত মজুতদার, সিন্ডিকেট লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক ও ভোক্তা। ভোক্তা নিপীড়নের এ প্রক্রিয়াটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এজন্য অবশ্যই চিহ্নিত অসাধু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। জনস্বার্থ বিবেচনায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন- এটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত