বাড়ছে আলসার আক্রান্ত শিশু

কেমিক্যালযুক্ত খাদ্য গ্রহণে বিরত থাকতে হবে

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শিশুরা যে তাদের বিকাশের পথে কত রকমের বাধার মুখোমুখি হচ্ছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা বিপর্যস্ত হচ্ছে। এমনকি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাওয়াও তাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে অল্প বয়সেই তাদের শরীরে বাসা বাঁধে অধিক বয়সের রোগ। এক গবেষণার ফলের ভিত্তিতে প্রকাশ, শিশুদের পাকস্থলীতে ঘা বা আলসারে আক্রান্তের হার বাড়ছে। জুস, চিপস, চানাচুর, চিকেন ফ্রাই, টেস্টিং সল্ট ও ফাস্টফুডে কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে। যেসব শিশু এসব খাবার খায়, তারা ওষুধ খেলে কিছুদিন ভালো থাকে, আবার পেটে ব্যথা দেখা দেয়। এসব কেমিক্যালযুক্ত খাবার শিশুরা অব্যাহতভাবে খেতে থাকলে কিডনি ও অন্ত্রে ক্যান্সার হতে পারে। এটা হওয়ার আশঙ্কা ৯৫ ভাগ। এছাড়া এক সময় পাকস্থলী ছিদ্র হতে পারে। পাশাপাশি আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়। অধিকন্তু এসব খাদ্য দেহের উপকারী জীবাণু নষ্ট করে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। হজমশক্তি হ্রাস পায়। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, বর্তমানে শিশু ক্যান্সার ও ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এই কেমিক্যালযুক্ত খাবার। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে মেধাবী জনবল খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ; কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ভবিষ্যৎই যেন ধ্বংস হতে বসেছে। ভেজালে ভরা খাদ্য বাজারে। আমরা সবাই ভুগছি নিরাপত্তাহীনতায়, তবে সবচেয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছে শিশুরা। মানবতাবিবর্জিত কিছু মানুষ শিশুখাদ্যকেও ভেজাল থেকে নিস্তার দিচ্ছে না। তারা অতি মুনাফার লোভে খাবারের নামে শিশুদের বিষ খাওয়াচ্ছে। পাশাপাশি কেমিকেলযুক্ত খাবার শিশুদের জিনগত পরিবর্তন করে ক্যান্সার সৃষ্টি করছে দূষিত খাবার। দূষিত খাবারে বাচ্চাদের দেহকোষ, মস্তিষ্ক, কিডনি ও লিভার সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেখা দিচ্ছে হাঁপানি রোগ, তাদের রক্ত চলাচলেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। গবেষণায় শিশুদের আচরণগত সমস্যার জন্যও ভেজাল খাবারকে দায়ী করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিক মিশিয়ে সেগুলোকে করা হচ্ছে আরো বিষাক্ত। লক্ষণীয় যে, এসব খাবারের আবার প্রধান টার্গেট প্রধানত মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। তাদের জন্যই গলির দোকানগুলোতে প্যাকেটজাত এসব খাবারের পসরা দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে এসব বিষাক্ত খাবারের বিক্রি সর্বাধিক। সস্তায় মুখরোচক রংচড়ানো এসব খাবার শিশুদের সহজেই আকর্ষণ করে। সচেতন মা-বাবা অনেক সময় বাধ্য হয়ে শিশুর আব্দার মেনে এসব দূষণযুক্ত খাবার কেনেন। আবার অনেকে এসব খাবারের ভয়াবহ দিক নিয়ে উদাসীন থাকেন। যার পরিণতি হয় ভয়াবহ। শিশুদের রোগবালাই লেগেই থাকে। ফলে প্রতিটি পরিবারের স্বাস্থ্য বাবদ বাড়তি অর্থ খরচ করতে হয়। অনেকের পক্ষে আবার তা বহন করা সম্ভব হয় না।

খাদ্যে ভেজাল আমাদের দেশে একটি ভয়াবহ সমস্যা। কিছুতেই এটা থামানো যাচ্ছে না। ফলে সব বয়সি মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। ফলে আজকাল বাবা-মাকে শিশুর জন্মের আগে থেকেই তার নিরাপদভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে থাকতে হয় দুশ্চিন্তায়। আমরা ধারণা করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে সচেতন। বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা অবশ্যই তাদের স্পর্শ করে। সংগত কারণেই শিশুর জন্য দুশ্চিন্তামুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে তারা আরও সক্রিয় হবেন- তা প্রত্যাশা করা যায়। কিছুতেই কেমিক্যালযুক্ত খাবার, যা মূলত বিষ, তা বাজারজাত করতে দেয়া যাবে না। মা-বাবাকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। দূষণযুক্ত খাবার কিছুতেই শিশুর হাতে তুলে দেয়া যাবে না। এই নিয়ে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক তৎপরতার কথাও ভাবতে হবে।