অনলাইনে মানহীন প্রসাধনীর ব্যবসা

ত্বকের জন্য ক্ষতিকর

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সৌন্দর্যের মানদণ্ড ফর্সা হওয়া নয়। ফর্সা হওয়া মানে সাদা হওয়া- এটি একটি ঔপনিবেশিক মানসিকতা। অথচ এই রকম মানসিকতায় আক্রান্ত হয়ে অনেকে ত্বকের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকেন, ভুগতে হয় আজীবন। আজকাল অনলাইন মার্কেটিংয়ে সহজ হয়ে যাওয়ায় কিছু প্রতারক মন ভুলানো বিজ্ঞাপন দিয়ে অনেক মেয়েকে প্রলুব্ধ করছে ফর্সাকারী প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে। আর এসব প্রসাধনী বা ক্রিম ব্যবহার করে অনেকের মুখ রীতিমতো ঝলসে গেছে। ভুক্তভোগী এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বরাতে প্রকাশ, তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকায় একটি ক্রিম কিনে ব্যবহারের কিছু দিনের মধ্যেই শরীরের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। মুখ থেকে শুরু করে পুরো শরীর বিদেশিদের মতো ফর্সা হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে বিউটি ক্রিমের ক্ষতিকর কার্বনের প্রভাবে তার শরীরের চামড়া পুড়ে পাতলা হতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীর চুলার কাছে কিংবা অতিরিক্ত গরমে বাইরে বের হলেই চামড়া পুরে কালচে হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। তার গালের ত্বক পুড়ে মেছতার মতো কালো দাগ পড়তে শুরু করে। বর্তমানে এই শিক্ষার্থীর মুখসহ ত্বকের বিভিন্ন স্থানে চামড়া পুড়ে কালচে হয়ে গেছে। একজন শিক্ষিত সচেতন নারী যেখানে ফেইসবুকে দেয়া এই চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়েন, সেখানে সাধারণ নারীদের তো আরও সহজে প্রলুব্ধ হওয়ার কথা।

স্মর্তব্য, নিষিদ্ধ ক্ষতিকর কেমিক্যালে ভরা অখ্যাত সব রং ফর্সাকারী ক্রিম এখন রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে সর্বত্রই পৌঁছে গেছে। পত্রিকায় প্রকাশ, ফেইসবুকে মুন অনলাইন শপ, চাঁদনী, নুরসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর এবং মানহীন রং ফর্সাকারী ক্রিমের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি দেদারছে চলছে বিক্রি। অনলাইনে প্রকাশ্যে চলছে বিজ্ঞাপন। অথচ মনিটরিং নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইর। এ সুযোগে ভুয়া বারকোড, কিউআর কোড আর সিল বসিয়ে এসব ক্রিম বিক্রি হচ্ছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে! ওই ক্ষতিকর ক্রিম মাখার ফলে ত্বক ভয়ানক পাতলা হয়ে যায়। মুখে ব্রণসহ নানা সমস্যাও তৈরি হতে দেখা যায়। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রিম দিয়ে ফর্সা নয় ত্বকের যত্নের ওপর নির্ভর করে প্রকৃত সৌন্দর্য। এ ধরনের ক্ষতিকর উপাদানের কারণে একবার ব্যবহারেই ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া অনেকদিন ধরে ব্যবহারের ফলেও দেখা দিতে পারে ত্বকের ক্যান্সার থেকে শুরু করে নানা ধরনের চর্মরোগ। উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই মাসে বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহের পর ল্যাবে পরীক্ষা করে ক্ষতিকর মাত্রায় পারদ (মার্কারি) ও হাইড্রোকুইনোন থাকায় ১৭টি রং ফর্সাকারী ক্রিমের বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। মুখে মাখার এসব ক্রিমে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে অন্তত ১০০ গুণ বেশি পারদ এবং হাইড্রোকুইনোন রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারে ত্বকে নানাবিধ রোগের সৃষ্টি হতে পারে বলে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সতর্ক করে বিএসটিআই। এই ধরনের কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চালানো জরুরি।

ফেইসবুকে অনলাইন কেনাকাটা এখন জীবনচর্চার অংশ হয়ে গেছে। তবে কেনার আগে অবশ্যই পণ্যের গুণমান নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। চটকদার বিজ্ঞাপনে ক্রেতাদের বিভ্রান্ত হওয়া চলবে না। পাশাপাশি যারা কারসাজি করে পণ্য বিক্রি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ নিয়ে নজরদারি সংস্থাগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে।