‘পিজিন’ ভাষা

মাকসুদা আক্তার

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

‘পিজিন’ (Pidgin) হলো বিশেষ এক ধরনের ভাষা। ইংরেজি ‘Business’ শব্দের চীনা উচ্চারণ হলো ‘পিজিন’। বলা হয়ে থাকে চীনারা ভালো ইংরেজি জানে না এবং ইংরেজরাও চীনা ভাষায় ভালো করে কথা বলতে পারত না। ফলে উভয় বণিকদের মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানোর জন্য চালু হয় ‘পিজিন’ ভাষা। পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে এর প্রচলন শুরু হয়। দুই ভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ যখন তৃতীয় একটি ভাষা ব্যবহার করে- যোগাযোগ রক্ষা করে তাকে লিঙগুয়া ফ্রাঙ্কা বলে। কিন্তু এ তৃতীয় ভাষাও যদি না থাকে, তবে উভয় ভাষাভাষীর মানুষ উভয় ভাষা থেকে কিছু শব্দ নিয়ে এবং অন্যান্য ভাষা থেকেও শব্দ গ্রহণ করে যখন যোগাযোগ রক্ষা করে, তখন তাকে পিজিন ভাষা বলে।

এই ভাষার শব্দভান্ডার প্রচুর হ্রাস পায় এবং যারা এই ভাষা ব্যবহার করে এই ভাষা তাদের কারোরই নিজস্ব ভাষা নয়। পিজিনের গঠন প্রকৃতি একটি বিশেষ গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হ্রাস পায়। এখানে ক্রিয়ার সাধিত রূপের পরিবর্তে ক্রিয়াবাচক অব্যয় ব্যবহৃত হয়।

বিশেষ্য ও বিশেষণের মধ্যে কোনো মিল নেই এবং পদান্বয়ী অব্যয়ও বাদ যায়। পিজিন ভাষার চেয়ে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা অনেক বেচি সঙ্গতিপূর্ণ কারণ প্রতিটি পিজিন ভাষাই হলো লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা। তবে সব লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা পিজিন ভাষা নয়।

প্রাচীনকাল থেকে পিজিন ভাষার প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রিক ও ল্যাটিনের পিজিনজনিত প্রকৃতি প্রচলিত ছিল বলে মনে করা হয়। এ ভাষার কোনো নমুনা পরবর্তীতে আর সংরক্ষণ করে রাখা হয়নি। এ ভাষা সম্প্রদায়ের নিজস্ব কোনো ভাষাগোষ্ঠী নেই। মূলত ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী যোগাযোগের প্রয়োজনে এ ভাষার উদ্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- কলকাতার হগ মার্কেটের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ খরিদ্দারের সঙ্গে কথা বলার সময় পিজিন ভাষা ব্যবহার করত বলে জানা যায়। যেমন- ‘নিতে হলে নিন, না নিলে চলে যান’ এই বাক্যটিকে পিজিন ভাষায় বলতো- ‘টেক টেক তো টেক, নো টেক তো নো টক’।

পিজিনগুলোকে তাদের বিকাশ অনুসারে চার ধরনে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে : জার্গন, স্থিতিশীল পিজিন, বর্ধিত বা প্রসারিত পিজিন এবং ক্রেওল। পিজিন ভাষা ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ না। তবে কোনো অঞ্চলে এর অত্যধিক ব্যবহারের কারণে যদি ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজে পরিণত হয়, তবে তাকে ক্রেওল বলে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত ১৮টি পিজিন তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি বিলুপ্ত এবং অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে বলে ধারণা করা হয়। নাইজেরিয়া, ঘানা, ক্যামেরুন এবং নিরক্ষীয় গিনিজুড়ে ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি লোক পিজিন ভাষায় কথা বলে বিশ্বাস করা হয়।

 

শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]