ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরিব রোগীরা যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়

মিকাইল হোসেন
গরিব রোগীরা যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়

বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে। ফলে জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রোগব্যাধির ও ধরন পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক যুগে রোগব্যাধির ও উন্নতি হয়েছে। অনেক বড় বড় রোগ এখন ঘরে ঘরে দেখা যাচ্ছে। আগে কিছু রোগ শুধু বড় লোকদের দেখা যেত, বর্তমানে ধনীদের সঙ্গে সঙ্গে গরিবদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে, ধনীদের জীবনযাত্রায় গরিবদেরও প্রভাবিত করছে। কারণ অনেক রোগকে বলা হয় সভ্যতার রোগ। উন্নতমানের ব্যয়বহুল রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিসের সমস্যা, ক্যান্সার, পেটের সমস্যা, স্ট্রোক, হাড় ক্ষয়, টিউমার, নিউরো সমস্যা, থ্যালাসেমিয়া, থায়রয়েড ইত্যাদি। বাংলাদেশে বর্তমানে এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখ লাখ ক্ষেত্রবিশেষ কোটি কোটি যার অন্যতম অংশ হচ্ছে গরিব মানুষ। প্রতিটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দেখলে সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ যা ২০৩৫ সালে দাঁড়াবে ৩২ লাখে। প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে ২ লাখ মানুষ। জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ বা দুই কোটি। অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশে বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ মারা যায় হার্টের সমস্যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম বয়সে হার্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী উন্নত বিশ্বের তুলনায় এই হার ১৭ গুণ বেশি। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের মত। যদিও আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি জানে না নিজের রোগটি সম্পর্কে। ডায়াবেসি রোগের কারণে বাড়ছে অন্ধত্ব, হার্টের সমস্যা, কিডনি রোগ, স্ট্রোক রোগের ঝুঁকি। লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশে না থাকলেও তথ্যমতে, দেশে প্রায় ৪.৫ কোটি মানুষ লিভার রোগে আক্রান্ত এবং ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। রোগীর সংখ্যা কমাতে না পারলে বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা করা আমাদের দেশের পক্ষে সম্ভব না। দেশের সাধারণ মানুষ অসচেতনতায় এবং বাধ্য হয়ে এসব বড় বড় উন্নতমানের ব্যয়বহুল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যার চিকিৎসা ব্যয় বহন করা গরিব রোগীদের পক্ষে সম্ভব না। এসব রোগের চিকিৎসা অনেক সময় দেশে সম্ভব না। আর কিছু রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব হলেও যার খরচ লাখ লাখ টাকা। যা বহন করা গরিব মানুষের পক্ষে তো সম্ভব না ক্ষেত্রবিশেষ মধ্যবিত্ত বহন করতে গিয়ে গরিব হয়ে যাচ্ছে। সমগ্র জীবনের সঞ্চিত সঞ্চয় দিয়ে ও রোগীর চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। আর বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য গরিব মানুষের থাকে না ফলে তাদের বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। প্রতি বছর রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী সবার জন্য বড় রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোটি কোটি অসুস্থ নাগরিকদের নিয়ে উন্নত দেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই রোগের সব উৎস যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।

উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা)

পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলেজ, সাভার, ঢাকা

Email:[email protected]

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত