ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নাগালের বাইরে ওষুধের দাম

নিম্ন আয়ের মানুষের কাটছাঁট
নাগালের বাইরে ওষুধের দাম

সব ধরনের পণ্যের দামেই সাধারণ মানুষের যাপনচর্চাকে কঠিন করে তুলেছে। নিত্যপণ্যের দামে মানুষের হাহুতাশ অনেক আগে থেকেই চলমান রয়েছে। একইভাবে ওষুধের দামও অনেকের নাগালের বাইরে রয়েছে। ফলে খাবারের কাটছাঁটের মতো ওষুধেও একই পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। এটা সর্বজনবিধিত যে, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এর মধ্যেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো বেড়েছে ওষুধের দাম। প্রকাশ, দেশের ফার্মেসিগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ, জ্বর ও ডায়াবেটিসের ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। এ অবস্থায় জীবনধারণের অন্যান্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে তাই ওষুধের ব্যবহারেও কাটছাঁট করার চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। বলা হচ্ছে, অনেকে ৭ দিনের জায়গায় ৪ দিনের ওষুধ কিনছেন। কেউ কিনছেন প্রেসক্রিপশনের অর্ধেক ওষুধ। আবার সামান্য সুস্থবোধ করলেই ছেড়ে দিচ্ছেন ওষুধ সেবন। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ছে। ওষুধের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ডলার বিনিময়মূল্য বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে একে দাম বৃদ্ধি নয়; বরং মূল্য সমন্বয় বলছেন ওষুধশিল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ডলারের বিনিময়মূল্য ও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বেড়েছে। প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, পরিবহন ও সরবরাহ ব্যয় এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ওষুধের মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে। এসব খরচ কমে এলে আবার মূল্য সমন্বয় করে কমিয়ে আনা হবে।

বাস্তবতা হলো, যে অর্থেই পণ্যের দাম বাড়ানো হোক, তা কমে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার ভরসা কমই করা যায়। তেলের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা তা লক্ষ্য করেছি। এদিকে সংশ্লিষ্টদের বরাতে প্রকাশ, দাম বাড়ায় ঠিকমতো ওষুধ কিনে খাচ্ছেন না নিম্ন আয়ের মানুষ। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করলে ব্যাকটেরিয়াগুলো পুরোপুরি ধ্বংস না হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তখন সেই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ওই অ্যান্টিবায়োটিকের আর কোনো প্রভাব থাকে না। এ অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ১১৭টি ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। বাকি প্রায় দেড় হাজার কোম্পানির ৩৭ থেকে ৪২ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে একেবারেই নির্বিকার ওষুধ প্রশাসন। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মও এমনটাই নির্দেশ করে। দেশের ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিতেও তা ছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে ওষুধ কোম্পানির দাবির মুখে বলা হয়, ১৭ শতাংশ ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে। বাকিটা নির্ধারণ করবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। তখন এটিকে বলা হলো ইন্ডিকেটিভ প্রাইস। বাংলাদেশে কেন সব ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করছে না, তা প্রশ্ন বটে।

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প দ্রুত বর্ধনশীল খাত। পৃথিবীর অনেক দেশেই বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়, তা একটি বড় অর্জন বটে। এ অবস্থায় দেশের মানুষ ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ওষুধ কেনার দাবি করতেই পারে। কিন্তু তা কেন সম্ভব হচ্ছে না, তা প্রশ্ন বটে। বিষয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ওষুধশিল্প কাঁচামাল আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তাই ডলারের মূল্য ও কাঁচামালের দাম বাড়লে ওষুধের দামও বাড়ে। এই অবস্থায় যদি কাঁচামাল দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হতো, তাহলে খরচও অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। এদিকে মনোযোগী হওয়া দরকার। পাশাপাশি ওষুধের দাম নির্ধারণে ক্রেতা স্বার্থ সংরক্ষণ করা জরুরি। এদিকে সরকারের সুদৃষ্টি প্রত্যাশিত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত