ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সর্বত্র ডেঙ্গুর বিস্তার

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জরুরি
সর্বত্র ডেঙ্গুর বিস্তার

ডেঙ্গু ঢাকাবাসীর জন্য আতঙ্কের বিষয় হয়েছে বেশ আগেই। এখন এটি সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ডেঙ্গু রোগের হটস্পটে পরিণত হয়েছে- এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু হানা দিয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। রাজধানী সীমানা ছাড়িয়ে জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। প্রকাশ, চলতি বছর ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে এমনই শঙ্কাও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এদিকে গ্রামে-গঞ্জে এ রোগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা সেভাবে তৈরি না হওয়ায় শঙ্কা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে গত শনিবার পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৯ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর এই পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৩ জন ঢাকার বাইরের। এ অবস্থায় রোগীর চাপ কমাতে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা (অন্য বছরের এ সময়ের তুলনায়) বেশ কয়েক গুণ বেশি। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি। সংগত কারণেই আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে সচেতন- এটি একটি স্বস্তির সংবাদ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি জেলায় সারা বছর পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে ধরে নেয়া যায় আক্রান্ত রোগী অন্য জেলা থেকে এসেছে; কিন্তু এর বেশি হলে ধরে নিতে হবে স্থানীয়ভাবে এ রোগ ছড়াচ্ছে। আর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু বাড়ছে। তাছাড়া ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল, তাতে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় ১ লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে সেবার মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের। মাঝে ১ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও ২০২১ সালে ফের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু ছড়ায়। তাতে ২৮ হাজার ৪২৯ জন এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে যায়, মৃত্যু হয় ১০৫ জনের। গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দেশে গেল বছর রেকর্ড মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। এদিকে, এ বছর শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৭০৪ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, শুধু তাদেরই তথ্য আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হননি, এমন ব্যক্তিরা সরকারের হিসাবের বাইরেই থেকে যান। রোগের প্রকোপ বুঝতে প্রকৃত সংখ্যা জানা দরকার।

ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এ জন্য প্রথমে রাজধানীর বাইরে এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। পাশাপাশি এই রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে থাকতে হবে। মূলত সব জেলায় নগরায়ণ হচ্ছে, এজন্য ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। এজন্য নির্মাণকাজে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সবাইকে এই মৌসুমে নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে চলত হবে। সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক ব্যবস্থাপনার কাজ আরও জোর দিয়ে করা গেলে এ বছর যে ভয়ভীতি সেটি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু একার পক্ষে কিংবা একক সংস্থার পক্ষে মোকাবিলা সম্ভব নয়, এই জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত