ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেখ হাসিনার জাপান সফর

জাপানে বাঙালি ব্যবসায়ীদের প্রাণের সঞ্চার

পি আর প্ল্যাসিড, কলামিস্ট, জাপান প্রবাসী
জাপানে বাঙালি ব্যবসায়ীদের প্রাণের সঞ্চার

সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সরকারের আমন্ত্রণে জাপান সফর করেন। বলা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এটি ছিল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সফর। বলছেন সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণকারীরা।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত জাপান পরিক্ষিত বন্ধু দেশ। স্বাধীনতার পর জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় কিছু বিষয় নিয়ে চুক্তি সম্পাদন করতেই সরকার প্রধান জাপান এসেছিলেন। তার জাপানে এবার তিন দিনের সফর সফল হয়েছে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এবার জাপান সরকার রাষ্ট্রীয় মর্যদায় আপ্যায়ন করেছে। এতেই ধরে নেয়া যায়, জাপান বাংলাদেশকে বা সরকারপ্রধানকে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছে। এবারের সফরে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মোট আটটি বিষয় চুক্তি সম্পাদিত হয়, যা আগে কোনো সরকারের সময়কালে সম্পাদিত হয়েছে বলে জানা নেই।

প্রধানমন্ত্রীর অল্পদিনের এই সফরে নানা বিষয়ে চুক্তি সম্পাদন আমাদের জন্য সুখের খবর বয়ে আনলেও দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে জাপান একটি উল্লেখযোগ্য দেশ হলেও আমাদের দেশে বিনিময়ে তাদের দৃষ্টি অনেক পিছিয়ে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর ক্ষেত্রে জাপানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এজন্য অবশ্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান, জাপানে তাদের দূতাবাস কর্তা, সর্বোপরি জাপানে বসবাসকারী সেই সব দেশের জনগণ তথা ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে ব্যবসা করতে আগ্রহী এবং দেশপ্রেমী প্রবাসী, যাদের মধ্যে দেশের উন্নয়ন করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে, তাদের আন্তরিক ইচ্ছা ও চেষ্টা বা আগ্রহেই জাপানের বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সেসব দেশে বিনিয়োগ করে তাদের দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে সহায়ক হয়েছে।

তাদের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বা দূতাবাসে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যা করা দরকার তা সঠিকভাবে করছে না। পাশাপাশি জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা তো আরো পিছিয়ে। তারা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে জাপানে নানা কাজেই বেশি সময় দেন। দেখে মনে হয়, তাদের কাছে দেশের চেয়ে দল বড়, তার চেয়ে বড় নিজের পকেট। যে কারণে এত বড় বিনিয়োগকারী দেশে বসবাস করেও সফলতার সঙ্গে নিজেরা দেশের জন্য তেমন কিছু করতে পারছেন না। এমনকি জাপানের ব্যবসায়ীদেরও দেশে বিনিয়োগে ততটা আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ তারা।

এমন এক দেশে থেকে তারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে জাপানি ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহী করতে পারেনি। যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করতে গেছে, তারা নিজ উদ্যোগেই গেছে। তবে এটাও ঠিক যে, তাদের বাংলাদেশে কাজ করে অধিকাংশের কাজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে নানা ধরনের খারাপ অভিজ্ঞতা। কেউ কেউ দেশে কাজ করতে গিয়ে তাদের মূলধন ফেলে চলে এসেছে। যদিও এর ব্যতিক্রমও আছে। তবে দেশকে ভালোবেসে ইনভেস্ট করতে গিয়ে নানা কারণে ব্যবসা গুটিয়ে সব ফেলে রেখে চলে আসাদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। উচিত ছিল, এদের কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা এবং পরামর্শ করে বিনিয়োগে ধরে রাখা। এই কাজটি জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসাীদের দ্বারাই সম্ভব ছিল; কিন্তু তারা তা করেনি। এমন এক দেশে থেকে তারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে জাপানি ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহী করতে না পারার পেছনে কিছু কারণ অবশ্যই রয়েছে। সেসব খুঁজে বের করা আবশ্যক।

যে কয়টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করতে গেছে তাদের অধিকাংশের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে নানা ধরনের খারাপ অভিজ্ঞতা।

গত প্রায় দুই দশক আগে জাপান প্রবাসী কিছু ব্যবসায়ী দেশের সঙ্গে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে এবং জাপানি বিনিয়োগকারীদের দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলার জন্য সংগঠিত হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে পদের লোভে তাদের মধ্যেই কতিপয় ব্যবসায়ীর বিতর্কিত ভূমিকার কারণে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। তার সূত্র ধরেই পরবর্তী সময়ে নতুনভাবে গঠিত হয় বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন জাপান। এখানেও দেশের রাজনীতির প্রভাব আর পদের লোভ কাজ করায় সংগঠনটি আলোর মুখ দেখেনি বা ভালো কোনো কাজ করতে সক্ষম হয়নি। ফলে নীতিগত কারণে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সংগঠনটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। বলে রাখা ভালো, এখানে সুবিধাভোগী হন টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের তখনকার রাষ্ট্রদূত, যা দেশপ্রেমীদের কাছে মোটেই কাম্য ছিল না। এমনটা না হলে ওই সংগঠন দেশে জাপানি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী অনেক প্রতিষ্ঠানকেই নিয়ে যেতে বা আগ্রহী করে তুলতে পারত।

দীর্ঘদিন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স ইন জাপান নামের সংগঠনটি ঘুমন্ত থাকলেও এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে তার সফরসঙ্গী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের উপস্থিতিতে এবং এরিসা লিমিটেডের কর্ণধার ড. মাসুদ খানের (পিএইচডি) মধ্যস্থতায় ওই ব্যবসায়ীদের দুটি গ্রুপ একসঙ্গে বসে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সব কিছু আলোচনা করার পর দুই গ্রুপ এক হয়ে দেশের কথা ভেবে নতুন করে আবার কাজ করতে সম্মত হয়। এতে পুরো জাপানে বাঙালি কমিউনিটিতে বিশাল ভালো প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছি। যা দেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি জাপানি বিনিয়োগকারী যেতে সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত