ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সেপটিক ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাস

পরিষ্কারে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি জরুরি
সেপটিক ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাস

নগরায়ণের সঙ্গে কিছু অনুষঙ্গ ও পরিষেবার সমাবেশ ঘটে, যেগুলোর ব্যবস্থাপনার ত্রুটি থাকলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। অনেক সময় তুচ্ছ ভেবে আমরা অনেক কিছুই এড়িয়ে যাই; কিন্তু সময়ান্তরে তা ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হয়ে ওঠে। যেমন ইদানীং দেশে গ্যাস সিলিন্ডারের পাশাপাশি সেপটিক ট্যাঙ্কের বিস্ফোরণের কথাও শোনা যাচ্ছে। সম্প্রতি সিদ্দিক বাজারে ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, সেটিও দীর্ঘদিন সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার না করায় বিষাক্ত গ্যাসে এ বিস্ফোরণ ঘটে। প্রায়ই দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমন ঘটনা ঘটছে। সদ্য রাজধানীর উত্তরখানে সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দু’জনই ছিলেন অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক। তথ্য অনুযায়ী, সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে শ্রমিকের মৃত্যু বাড়ছে। উল্লেখ্য, দেশে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে না। যার কারণে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে জমে থাকা বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আর যেসব শ্রমিক মারা যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই অপ্রশিক্ষিত, নানা ধরনের গ্যাস জমে তা যে প্রাণঘাতী হতে পারে, তা তাদের জানা নেই। অন্যদিকে দীর্ঘদিন সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার না করায় বিস্ফোরণের ঘটনারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় হলো, শ্রমিকের মৃত্যু ঠেকাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা থাকলেও সেটির বাস্তবায়ন নেই, নেই তদারকিও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপটিক ট্যাঙ্কে ভয়াবহ বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। যদি ট্যাঙ্কের পানিতে পরিত্যাজ্য ময়লা বা জৈব পদার্থ যায়, তাহলে সেখানে ক্ষতিকারক মিথেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মোনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও সালফার গ্যাস তৈরি হতে পারে। এসব গ্যাস তৈরির ফলে সে জায়গায় অনেক বেশি প্রেশার তৈরি হয় এবং ওই জায়গায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। অক্সিজেন না থাকায় ট্যাঙ্কের ভেতরের গ্যাস গ্রহণ করলে তা মানুষের সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়। যার কারণে সে মারাও যেতে পারে। এছাড়া গ্যাসগুলো যদি ট্যাঙ্কে বেশি দিন থাকে, তাহলে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনাও থাকে। সংগত কারণেই অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক দিয়ে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা বন্ধ করতে হবে। এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৭ সালে দেওয়া একটি নির্দেশনায় বলা হয়, সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কারে দুর্ঘটনা রোধে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সিটি করপোরেশন/ওয়াসা ব্যবস্থা নেবে। অপ্রশিক্ষিত শ্রমিক দিয়ে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা যাবে না। নির্দেশনাগুলো হলো- সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ওয়াসার সেপটিক ট্যাঙ্কের পয়ঃপরিষ্কার ও ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত শ্রমিক বাছাইপূর্বক তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রত্যেক শ্রমিককে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রদান এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিকদের একটি তালিকা নিজ নিজ দপ্তর/আঞ্চলিক দপ্তরে জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য করে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করবে। দুঃখজনক ঘটনা হলো, নীতিমালা থাকলেও বাস্তবায়ন নেই এই বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির।

সেপটিক ট্যাঙ্ক যেমন নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে, তেমনি শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। অবশ্যই প্রশিক্ষিত শ্রমিক তৈরি জরুরি। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাবলি বাস্তবায়ন করতে হবে, কর্তৃপক্ষের তদারকি জোরদার করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি ও প্রশিক্ষিত লোক ছাড়া এমন ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা যাবে না। ম্যানুয়ালি ট্যাঙ্ক পরিষ্কার বন্ধ করে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত