ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লোডশেডিংয়ে ব্যাহত শিল্প উৎপাদন

যথাযথ পদক্ষেপ দরকার
লোডশেডিংয়ে ব্যাহত শিল্প উৎপাদন

বিদ্যুৎ খাতে অস্থিরতা বেশ আগেই শুরু হয়েছে। এখন তা বড় সমস্যায় ফেলেছে। কারণ লোডশেডিং করতে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাপ পড়েছে আরও নানা খাত ও জীবনযাপনে। মূলত দেশে জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি বাড়ছে। স্থানীয় গ্যাস এবং আমদানিকৃত এলএনজি স্বল্পতার কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন কমেছে। কয়লা সংকটে পায়রায় চালু থাকা সবচেয়ে বড় কেন্দ্রের দুইটি ইউনিটের একটি বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরেকটিতে সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদিত হচ্ছে। আগামী জুনের প্রায় পুরোটা কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না রামপাল কেন্দ্রও। বলা হচ্ছে, দাম বেশি হওয়ার কারণে পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো। পেট্রোবাংলা এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর বরাতে প্রকাশ, অপ্রতুল স্থানীয় জ্বালানি, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি এবং অর্থ-ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি আমদানিতে ঘাটতি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে দেশে বর্তমানে দৈনিক প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। চলতি মাসে এটি ২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। ঘাটতি আরও বাড়তে পারে। সূত্রমতে, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন সম্প্রতি বৃদ্ধি না পেলে সংকট আরও গভীর হতে পারত। পাশাপাশি আরেকটি সংবাদ হলো, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৮ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে। সরকার এ বকেয়া শিগগিরই কমিয়ে না আনলে কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে কয়েকটিতে উৎপাদন কমে এসেছে।

বিদ্যুৎ সংকট শিল্প উৎপাদনে অনুভূত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ ঘাটতি এবং বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ শিল্পে উৎপাদন কমে গেছে বলে শিল্পমালিক ও উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা যায়। তথ্য অনুযায়ী, অনেক সম্ভাবনা থাকলেও কারখানার চাকা গতিশীল রাখতে না পারায় ব্যবসা গুটিয়ে বা আকার কমিয়ে নিয়ে আসছেন অনেক উদ্যোক্তা। মেশিন বন্ধ এবং কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর গরম ও তাপদাহের মধ্যে বিদ্যুতের ঘনঘন যাওয়া-আসার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শহর-গ্রামের জনজীবন। শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ মানুষের কষ্ট বেড়েছে। বিদু্যুতের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও ফ্যানসহ নানা ইলেক্ট্রনিক পণ্য নষ্ট হওয়ার ঘটনাও বেড়েছে বলে প্রকাশ। এলাকাভেদে দিনে চার থেকে ১০ বার বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে বা সরবরাহ বন্ধ থাকছে। কিন্তু অনেক সময় মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুৎ আসে এবং চলে যায়। এতে ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উল্লেখ, দেশে বর্তমানে আমদানিসহ দৈনিক ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রগুলোর। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। এ সময়ে দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি চাহিদা রয়েছে।

স্পষ্টত জ্বালানি সমস্যা বিদ্যুৎ সংকট তৈরি করেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীও বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন সক্ষমতা রয়েছে; কিন্তু জ্বালানিতে ঘাটতি রয়েছে। এই বিষয়টি আরও আগে ভাবা দরকার ছিল। তবে শুধু দামের কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে তা বিষয় বিশেষজ্ঞরা মানতে নারাজ। কারণ বিশ্ববাজারে এখন তেল-কয়লা-এলএনজির দাম কমে গেছে। খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির খরচ চুক্তিকৃত মূল্যের চেয়েও কম পড়বে। বরং এখানে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা রয়েছে বলে প্রতীয়মান। উৎস জ্বালানির সমস্যা অবশ্যই সমাধান করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এমনও বলছেন, ভবিষ্যতে জ্বালানি চাহিদা এবং সরবরাহের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা ফের সংশোধন করা দরকার। আর শিল্প উৎপাদন সচল রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত