ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তামাক চাষে বিপন্ন কৃষিজমি

নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন
তামাক চাষে বিপন্ন কৃষিজমি

তামাকজাতীয় পণ্য গ্রহণের পক্ষে সমর্থন জোগানোর একটি যুক্তিও বাস্তবে নেই। অথচ তামাকে বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার হাজারও যুক্তি দাঁড় করানো যায়। এর পরও দৃশ্যমান যে, তামাকে বিস্তার ক্রমে বেড়েই চলছে। উল্লেখ্য, শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, প্রাণ-প্রকৃতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তামাক। উৎপাদন থেকে সেবন, প্রতিটি ধাপে তামাকের ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য, জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪০ লাখ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। এর মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ তামাক উৎপাদিত হয় বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে। সেই তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষ ১৩-তে রয়েছে। বিশ্ববাজারের ১ দশমিক ৩ শতাংশ তামাক উৎপাদিত হয় এ দেশে। অনুসন্ধান বলছে, তামাক চাষের শুরু থেকে বিক্রি পর্যন্ত প্রায় ৯ মাস সময় লাগে। ফলে এই জমিতে অন্য খাদ্যশস্য চাষ করা অসম্ভব। আবার তামাক চাষ যেহেতু মাটির উর্বরতা হ্রাস করে, তাই এই জমিতে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের ক্ষমতাও কমতে থাকে। একই জমিতে পরপর দুই বা ততোধিক ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। উর্বর জমিতে ক্রমবর্ধমান হারে তামাক চাষ হওয়ায় খাদ্য উৎপাদনের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যপণ্য ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।

তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে প্রতিবছর পালিত হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এবার বুধবার ছিল দিবসটি পালনের দিন। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তামাক নয়, খাদ্য ফলান। লক্ষণীয় যে, তামাক নিয়ে সচেতনতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে তামাক কোম্পানি তথা করপোরেট পর্যায়ে অধিক তামাক উৎপাদনের কূটকৌশল। বিপুল অর্থ বিনিয়োগ আর মনভোলানো বিজ্ঞাপনের দাপটে তামাক কোম্পানিগুলোর রমরমা অবস্থা বিরাজমান। স্পষ্ট যে, তামাক চাষ টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমরা জানি, বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার একর। সর্বশেষ কৃষি পরিসংখ্যান ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশে তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণ ৯৯ হাজার ৬০০ একর। ২০২১ মৌসুমে বোরো, গম এবং আলুর একরপ্রতি গড় উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৬৮১ কেজি, ১ হাজার ৩৩৫ কেজি এবং ৮ হাজার ৫৩৮ কেজি। তামাকের পরিবর্তে এই জমিতে বোরো চাষ করা হলে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪২৮ টন বোরো, গম এবং আলু চাষ করা হলে যথাক্রমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৬ টন গম এবং ৮ লাখ ৫০ হাজার ৩৮৭ টন আলু উৎপাদন করা সম্ভব হতো।

তামাক চাষ শুধু ফসলি জমি নষ্ট করছে না, তামাক চাষিদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন গ্রিন টোব্যাকো সিকনেস নামে নিকোটিন বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত। আবার যারা তামাকজাতীয় পণ্য গ্রহণ করছেন তারা বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। অন্যদিকে তামাক চাষের মৌসুমে নারী এবং শিশুদের বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে হয় বিধায় তারাও মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্যক্ষতির শিকার হয়। শিশুদের দৈহিক ওজন কম থাকায় ত্বকের মাধ্যমে নিকোটিন শোষিত হওয়ায় তারা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে থাকে। এই অবস্থায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এফসিটিসির আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও শক্তিশালী করতে হবে। সিগারেটসহ সব তামাকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে। তামাক চাষ নিরুৎসাহিতকরণে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হোক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত