মন্দ লোক সংখ্যায় বেশি নয়

জিহাদ হোসেন রাহাত

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের প্রয়োজনে চলাফেরার সুবিধার জন্য একে অপরের সঙ্গে ওঠাবসা, কথাবার্তা এবং সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন পড়ে। মূলত এসব করতে গিয়ে তৈরি হয় সামাজিক সম্পর্ক। আবার চলার পথে এসব সম্পর্কেও ধরে ঘুণ। সামাজিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মায়া, মমতা এবং শ্রদ্ধা, সম্মানের সম্পর্কে অনেক সময় ধরে ফাটল। মানব মনে জন্মে হতাশা। জন্ম নেয় বিস্বাদ। শ্রদ্ধা-সম্মানের সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেকে নেয় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো গর্হিত পথ। বিবেচনাহীন এসব সিদ্ধান্তে ভিকটিম যতটুকু না ক্ষতিগ্রস্ত হন, তার চেয়েও বেশি কষ্ট পোহাতে হয় তার পরিবার-পরিজনকে।

ভালো মানসিকতার মানুষ কখনো আত্মহত্যার চিন্তা করেন না। তারা সহজেই হতাশ হন না। জীবনে ঘটে যাওয়া বড় কোনো ঘটনা কিংবা বিপদের সময়েও তারা মাথা ঠান্ডা করে জীবন পরিচালনা করেন। এ ধরনের মানুষ যে সাহসী ও বুদ্ধিমানের কাতারে পড়ে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সমাজে যেমন ভালো মানুষ বসবাস করেন, ঠিক তেমনি সমাজে আশ্রয় নিয়েছেন খারাপ মানুষও। এখানে খারাপ বলতে জীবনের দু-একটি খারাপ কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া মানুষকে বোঝায় না। যারা জন্মলগ্ন থেকে অধিকাংশ সময়ই খারাপের ওপর দিয়েই জীবন পার করছে কিংবা করেছেন তারাই মূলত সমাজ স্বীকৃত খারাপ মানুষ। এদের সংখ্যা সমাজে বেশি নয়। তবে এদের জ্বালাতনে সমাজে ভালোভাবে চলতে চাওয়া মানুষগুলোও নিজেকে অনিরাপদ মনে করেন। ভালো মানুষের মধ্যে কিছু খারাপ দোষ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে একজন খারাপ মানুষ কোনোভাবেই ভালো গুণের অধিকারী নন- সেটি অস্বীকার করা যায় না। খারাপ গুণগুলো মানুষের মধ্যে ছোট হয়ে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে সেটি বড় আকার ধারণ করে পুরো একটা সমাজকে গ্রাস করে নেয়। অনেক সময় সমাজের খারাপ মানুষগুলোর দ্বারা অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষটির ক্ষতি হওয়ার আগে কল্পনাও করতে পারেন না- সমাজের কোন মানুষটি রয়েছে ওতপেতে।

ফলে না জানার দরুন মানুষ হয় ক্ষতির শিকার। লোক ভয় এবং সমাজ লজ্জার কারণে প্রকাশ করতে পারেনা কিছুই। ফলে এসব ক্ষতিগ্রস্তের অধিকাংশই হতাশ হয়ে পড়েন। ভোগেন মানসিক যন্ত্রণায়। তবে আনন্দের বিষয় হলো, এদের মধ্যে একটি অংশ হতাশ হন না। জীবনের সব গ্লানি, কালো অধ্যয় ভুলে গিয়ে শুরু করেন নতুন জীবন। মূলত এরাই সাহসী, এরাই শক্তিশালী।

আবার সমাজে এক ধরনের মানুষ আছে, যারা কাউকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে কেবলমাত্র মানুষের ভালো গুণের কারণে। এই প্রাধান্য দেওয়ার মধ্যে সচরাচর কাজ করে না কোনো স্বার্থ। এখানে স্বার্থ ছাড়াই দেওয়া হয় ভালো গুণের প্রাধান্য। তবে যার মধ্যে ব্যাধিটি রয়েছে, সে নিজের প্রাধান্য পাওয়াকেই আনন্দিত হওয়ার উপলক্ষ্য মনে করে থাকেন। এই আনন্দিত হওয়ার উপলক্ষ্য বা মাধ্যমকে গুরুত্ব দিতে দিতে মানুষের হয় নতুন কিছুর অভিজ্ঞতা। বস্তুত, এই রোগটা প্রকাশ না করলে বোঝা যায় না সহজে। আর এই প্রকাশের ভাষা বা কারণগুলো দেখলে চিহ্নিত করা যায় সেসব মানুষকে। একটি বিষয় মনে রাখা চাই, পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে সতর্ক হতে হবে। খারাপ মানুষের সাহচর্য এড়িয়ে চলতে হবে। তবেই জীবন হবে সুন্দর ও ছন্দময়।

তরুণ কলামিস্ট