ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নেশা জাতীয় দ্রব্যের সহজলভ্যতা ও যথেচ্ছ ব্যবহার

মোস্তফা কামাল
নেশা জাতীয় দ্রব্যের সহজলভ্যতা ও যথেচ্ছ ব্যবহার

তামাকের ভয়াবহ দিক থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ এবং বিধিমালা ২০০৬ প্রণয়ন করেছে। বিশ্বের অন্যান্য ৭৭টি দেশের মতো বাংলাদেশেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি অনুসারে ১৯ মার্চ ২০১৬ তারিখ থেকে সব তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট ও কৌটার উভয় পাশে ৫০ ভাগজুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ কার্যকর হয়েছে।

এছাড়া বর্তমান সরকার জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করে এবং ২০১৫ সালের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) নীতিমালা প্রকাশ করে। আইন ও বিধি বাস্তবায়নের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি, তামাক চাষ নিরুৎসাহিতকরণ নীতি, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি ইত্যাদি প্রণয়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব নীতি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অধিদপ্তর, দপ্তরের পাশাপাশি সিটি করপরেশন, পৌরসভাসহ তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত গবেষণায় তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ৭ শতাংশ তামাক সেবন করে থাকে। আর প্রতিবছর এ হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ আকারে বেড়ে চলেছে। ২০১৭ সালে জিএসটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ মানুষ যেকোনো একটি তামাক পণ্য ব্যবহার করে থাকে। উদ্বেগের বিষয় হলো, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শুধু সিগারেটের ধূমপানীয় সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটি ৫০ লাখ এ উন্নীত হয়। বর্তমানে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ ৪ কোটি ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ প্রত্যক্ষভাবে তেমন ব্যবহার করছে। এছাড়া ৫৮ ভাগ পুরুষ ও ২৯ ভাগ নারী বিড়ি সিগারেট তামাক সেবন করে থাকে। আর নারীদের মধ্যে ২৮ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ পুরুষ প্রতিদিন পান, জর্দা, গুলের মাধ্যমে ধোয়াহীন তামাক সেবন করে। অন্যদিকে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রতিবছর ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে তামাকের কারণে এবং বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মৃত্যুর সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ ৯০ লাখে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ ধূমপানজনিত প্রধান আটটি রোগের প্রতিবছর প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। তদুপরি ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে তামাকজাত জনিত রোগে। প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে ভোগেন তাদের চিকিৎসাব্যয় বিপুল। প্রতিবছর যে হারে তামাক ব্যবহারের জনিত কারণে মৃত্যু হয়, এর অন্যতম কারণ হলো এসব দ্রব্যের সহজলভ্যতা এবং মূল্য কম হওয়া। ক্যান্সার হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, গত ২০ বছরে বিড়ি-সিগারেটর দাম যে হারে বেড়েছে তার চেয়ে নিত্যপণ্যের দাম যেমন- চাল, ডাল, তেল, আটার দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে নেশাজাতীয় দ্রব্য সহজলভ্যতা যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশে যে হারে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। মাদক সেবন ও বিক্রিতে ছিন্নমূল মানুষ ছাড়াও উচ্চবিত্ত নারীরা ইয়াবাসহ নানা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। এভাবে কোমলমতি শিশু ও স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও জড়ানো হচ্ছে এ পেশায়। ছোট ছোট নেশায় এখন আবদ্ধ নয় এখনকার তরুণরা বড় নেশায় বুদ হয়ে আছে। এদের রক্ষা করতে হবে। পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও অহরহ দেখা যায় ধূমপান করতে। এক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ হওয়া দরকার।

ধূমপানবিরোধী আইনের বাস্তবায়ন তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে জনগণকে সচেতন করলেও কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর উচ্চ হারে কর আরোপ করা ও মূল্যবৃদ্ধি বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক গবেষণায় বলেছে ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধিতে ৪২ মিলিয়ন লোক ধূমপান ত্যাগ করবে এবং উন্নয়নশীল দেশে ৯ মিলিয়ন লোকের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। তাই এ বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।

শিক্ষার্থী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত