জাতীয় বাজেট ২০২৩-২০২৪

বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বাজেট শুধু কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো বা কমানোর ব্যাপার নয়, দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন ও জীবনমানে স্বস্তি বজায় রাখার রূপকল্পও বটে। সেটা এবার কতটুকু প্রতিফলিত হয়েছে তা নিয়ে চলছে বাজেট বক্তৃতার পরই বিবিধ বিশ্লেষণ। বলতেই হয়, নানা চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপন করেছে সরকার। ১ জুন জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের সময়ই ক্ষমতাসীন সরকার ভোটারবান্ধব বাজেট পেশ করে। কিন্তু নির্বাচনী বছরের জন্য প্রস্তাবিত এই বাজেটে খুব একটা সুখবর নেই সাধারণ মানুষের জন্য- বিশ্লেষকদের এমনই অভিমত। সাধারণত প্রতিটি নির্বাচনী বছরে ভোটারদের খুশি করতে থাকে নানা খাতে কর ছাড়, প্রাপ্তির মাত্রাও থাকে বেশি। কিন্তু ভোটারদের তুষ্ট করার মতো নির্বাচনী বছরে এবার ভোটারবান্ধব বাজেট করতে পারেনি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উৎস থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। লক্ষণীয়, গত কয়েক বছরে প্রাক্কলন বা লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সংগতি রেখে রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি সরকার। এ অবস্থায় বড় অঙ্কের নতুন এ বাজেটে ঘাটতি পূরণের জন্য দেশি-বিদেশি উৎস থেকে নেয়া ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে সরকারকে। আর ঋণনির্ভর বাজেটের আকার বাড়ায় এর অর্থ সংস্থানের চাপ ঘুরেফিরে সাধারণ নাগরিকদের ওপরই পড়বে। বাজেটে অর্থ সংস্থানের যে খাত দেখানো হয়েছে, এর বড় একটি অংশ আসবে দেশি-বিদেশি ঋণ থেকে। এর মধ্যে এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিদেশি ঋণ পাওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের লক্ষ্য হলেও আমরা একই সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করতে চাই।’ অর্থমন্ত্রীর চাওয়াটি উৎসাহব্যঞ্জক। অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, এরই মধ্যে সরকারের সময়োপযোগী কৌশলের প্রভাবে লেনদেন ভারসাম্যের অস্থিতিশীলতা কমে এসেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বরং অর্থের সুনির্দিষ্ট জোগান ছাড়া খরচ বৃদ্ধির এ ধরনের রূপকল্প পরিস্থিতিকে আরো বেহাল করে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এই ধরনের সংশয়ের জবাব অর্থমন্ত্রী দেবেন- এমন প্রত্যাশা করা যায়। এবারের বাস্তবানুগ বাজেট প্রদান কঠিন হবে, এমন একটি ধারণা সবারই ছিল। কারণ কোষাগারে অর্থাভাবে সরকারি সংস্থাগুলোও বিপর্যস্ত। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কাউকে টাকা দিতে পারছে না। অর্থের অভাবে সরকারও আমদানির বাজার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্বালানির সংস্থান করতে পারছে না। সদ্য বাংলাদেশের ঋণমান অবনমন করেছে মার্কিন ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা মুডিস। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্যাকেজ গ্রহণও এ অবনমন ঠেকাতে পারেনি। এ অবস্থায় বিষয় বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য হলো, উচ্চাভিলাষী এ বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান কীভাবে হবে, তা স্পষ্ট নয়। চলমান মূল্যস্ফীতি মোকালিা নিয়েও প্রয়োজনীয় কোনো দিকনির্দেশনা নেই। সামগ্রিকভাবে বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে অগ্রসর হচ্ছে, সেটার প্রেক্ষাপটে রাজস্ব কাঠামো, অনুমিতি, এগুলো খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না।

প্রস্তাবিত বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অনেক রূপকল্পের কথা বলা হয়েছে। আছে নানা অর্জন আর প্রত্যাশার কথা। প্রত্যাশা নিয়ে সুর্নিদিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা দরকার। বলাই াহুল্য, রূপকল্পের স্বপ্ন দেখলে সেটি বাস্তবায়নের রোডম্যাপও থাকতে হয়। এই নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া হবে বলে আশা করা যায়। আর প্রাক্কলিত রাজস্ব আদায়ে অবশ্যই সক্ষমতা দেখা হবে। বাজেটটি নিঃসন্দেহে সম্প্রসারণমূলক, এটা বাস্তবায়নে সরকারকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম ও ধীশক্তির পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বস্তিও বজায় রাখতে হবে।