ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পুরান ঢাকায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই বসবাস

কেমিক্যাল গুদাম-কারখানা যথারীতি বিরাজমান
পুরান ঢাকায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই বসবাস

নিমতলী ট্র্যাজেডি ভুলে যাওয়ার নয়। রাজধানীর চানখারপুলের নিমতলীতে ২০১০ সালের ৩ জুন রাত ৯টার দিকে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন ধরে যায়। সেখানে বিপজ্জনক কেমিক্যাল ছিল। ফলে আগুনের লেলিহান শিখা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। মুহূর্তে আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষের চোখের সামনে বহু মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। সেই দুর্ঘটনায় ১২৪ জন প্রাণ হারান। আহত হন অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকান ও কারখানা। এ ঘটনা তখন জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করে, দেশব্যাপী মানুষ ভুক্তভোগীদের প্রতি আবেগাক্রান্ত হয়। নিরাপদ পুরান ঢাকা নিশ্চিত করার দাবি ওঠে নানা অবস্থান থেকে। সরকারও এ নিয়ে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবে অবস্থা তথৈবচ। ছোটবড় দুর্ঘটনা লেগেই আছে। অথচ কেমিক্যাল গুদাম থেকে সৃষ্ট সেই ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদাম-দোকান সরানোর তোড়জোড় শুরু হয়। বাসযোগ্য এলাকা গড়তে আসে নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। ভয়ংকর কেমিক্যালে ঠাঁসা গুদাম-দোকানের এলাকায় মৃত্যু হাতে নিয়েই বসবাস করছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।

ঘটনার ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে, আমরা কি কোনো শিক্ষা নিয়েছি? এককথায় বলা যায়, নিমতলী ট্র্যাজেডি থেকে আমরা কোনো শিক্ষাই নেইনি। এমন সর্বনাশা ঘটনাও আমাদের পথ দেখাতে পারেনি। ভুক্তভোগী পরিবার, আর আহত যারা বেঁচে আছেন, শুধু তারাই বলতে পারবেন, সেদিন তাদের চোখের সামনে কী বিভীষিকাময় চিত্রই না ফুটে উঠেছিল! আজও তা তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। স্বজন হারালেও মৃত্যুঝুঁকি তাদের পিছু ছাড়েনি। বছরের পর বছর ধরে তারা এ ঝুঁকির মধ্যেই বসবাস করছেন। প্রভাবশালীরা এখনও বাসাবাড়িতে রাসায়নিকের গুদাম বানিয়ে রেখেছেন। প্রকাশ, নিমতলীর ৫৫ নম্বর বাড়িতে সেই আগুনে অঙ্গার হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬ জন। তাদের মধ্যে বাড়ির মালিক শরীফ উদ্দিন দোলা মা, ছোট তিন ভাই, নানি, মামাসহ ৬ জনকে হারান। তার বরাতে বলা হয়, অনেকেই শুধু ৩ জুন ভয়াবহ ঘটনাটি মনে করেন। কিন্তু এ ট্র্যাজেডি সবসময় তাদের পোড়ায়। এ ভয়াবহ আগুনের দায় কার, তা জানতে পারা যায়নি এক যুগের বেশি সময় পরও। বংশাল থানায় একটি জিডি করেই লাশ হস্তান্তর করা হয়। এতে আগুনের জন্য দায়ী কে, তা-ও শনাক্ত হয়নি। আবেগ আর কথামালার ভারে এভাবে ঘটে বিচারহীনতার ঘটনা। অথচ এই ঘটনার যথাযথ বিচার হলে হয়তো এড়ানো যেতো অনুরূপ অনেক দুর্ঘটনা।

উল্লেখ্য, নিমতলী ট্র্যাজেডির প্রায় ১০ বছর পর সেই ‘নিমতলী’র ঘটনারই পুনরাবৃত্তি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ আগুন। সেদিনের ঘটনায় সত্তরের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। পুরান ঢাকাকে নিয়ে একটি প্রবাদ আছে, ‘বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলি’। বলা বাহুল্য, সেই আদি প্রবাদ একবিংশ শতাব্দীতেও বহাল রয়েছে। আর কেমিক্যাল কারখানা অলিতে-গলিতে রয়ে গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতনই বলা যায়, তবে নজরদারি কমই প্রতীয়মান। কিন্তু নাগরিক নিরাপত্তায় বিপজ্জনক কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম অবশ্যই সরাতে হবে। এ নিয়ে সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত