ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যশোরে কলেরার বিস্তার উদ্বেগজনক

মহামারি পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা
যশোরে কলেরার বিস্তার উদ্বেগজনক

কলেরার মতো ভীতিকর রোগটি লুপ্ত হয়েছে ভাবা হলেও এটি এখনও বিরাজমান। অতীতে এই রোগে বাংলা অঞ্চলে শত শত লোক মারা যেত। কখনও কখনও মহামারি আকারে আবির্ভূত হতো। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, ব্যাপক টিকাদানের ফলে রোগটি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে জানা গেল, যশোরে ছড়িয়ে পড়েছে কলেরা। তথ্য অনুযাযী, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এপ্রিল মাসে গড়ে ২৮ জন রোগী ভর্তি হলেও মে মাসে বেড়ে ৪০ জনের মতো পৌঁছেছে। পাঁচ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পাশাপাশি করোনার রেড জোন ওয়ার্ডকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় দ্বিগুণ রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। শয্যা না পেয়ে করিডোর ও মেঝেতে চলছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা। প্রচণ্ড গরমে পানিবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সের মানুষ। অর্থাৎ বর্তমানে হাসপাতালে শয্যার চেয়ে অনেক বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ অবস্থায় চিকিৎসক-নার্স সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। নির্ধারিত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা সংকটে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় একটি নতুন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তবে কলেরার স্যালাইনের সংকট রয়েছে বলে জানা যায়।

সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, যশোরে কলেরার প্রাদুর্ভাব বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ডায়রিয়ার প্রকোপ মনে করা হলেও এর লাগামছাড়া বিস্তারে স্বাস্থ্য বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। জাতীয় রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রোগতত্ত্ব গবেষণা দল দুই মাসে দুই দফায় উপদ্রুত অঞ্চল পরিদর্শন করেছে বলে জানা যায়। এতে তারা নিশ্চিত হয়েছেন, ‘পয়েন্ট সোর্স’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি উৎস থেকেই জীবাণুর বিস্তার ঘটেনি। বরং ‘মাল্টিপোল সোর্সে বা একাধিক উৎস’ জীবাণুর অস্তিত্ব রয়েছে। এমনকি গ্রামের সাবমার্সিবল টিউবওয়েলের পানিতেও জীবাণু পাওয়া গেছে। প্রথমবারের গবেষণায় শহরের সাবমার্সিবল টিউবওয়েলেও কলেরার জীবাণু শনাক্ত হয়েছিল। এবারের গবেষণায় পানির পাশাপাশি অন্যান্য খাবার থেকেও জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে প্রকাশ। সূত্র মতে, স্বাস্থ্য বিভাগ এটাকে ‘আউটব্রেক কন্টিনিউ’ বললেও এখনও ‘এপিডেমিক’ বা মহামারির পর্যায়ে গেছে এমনটি বলতে নারাজ। তবে ‘এনডেমিক’ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এনডেমিক হলে দীর্ঘমেয়াদে এ রোগের জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত কমিউনিটিতে থেকে যায় এবং আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ পেলেই বিস্তার ঘটতে থাকে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

যশোরের কলেরার প্রাদুর্ভাবকে হালকাভাবে দেখার অবকাশ ইেন। কারণ সংশ্লিষ্টরা মহামারি পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন। তাই পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে আইইডিসিআরের গবেষক দল এ পরিস্থিতিতে ছয়টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে : পৌরসভার পানির লাইনের লিকেজ ও দূষণের উৎস খুঁজে তা সমাধানের ব্যবস্থা, পৌরসভার পানিতে নিয়মিত ক্লোরিন দিয়ে বিশুদ্ধকরণের ব্যবস্থা, উপদ্রুত অঞ্চলে পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ (ক্লোরিন ট্যাবলেট) সরবরাহ ও বিতরণের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপদ পানির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার রাখা এবং পানি ও পয়োনিষ্কাষণ লাইনের মধ্যে দূরত্ব নিশ্চিত করা। এগুলো অবশ্যই আমলে নিতে হবে। আর যেহেতু খাবার পানিতেই রোগের জীবাণু আছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে, সেহেতু সেটি ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অবশ্যই পানি বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। রোগটি সংক্রমক বিধায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত