সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ বছরের দ্বন্দ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছায়াযুদ্ধ চলেছিল প্রায় সারা বিশ্বেই। তবে স্নায়ুযুদ্ধের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি ছিল ইউরোপে। সেখানে সোভিয়েতের ভয় ছিল প্রভাব হাতছাড়া হওয়া নিয়ে। আর মার্কিনিরা সারাক্ষণই খোঁচাচ্ছিল, মিত্ররা নরম হয়ে পড়েছে বলে। এখনকার চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব তার থেকে অনেকটাই আলাদা। তাইওয়ান-উত্তর কোরিয়া ইস্যু বাদ দিলে অন্তত কোনো পক্ষই সামনাসামনি একে অপরের দিকে অস্ত্র তাক করে নেই। তারপরও এ দুই পরাশক্তির প্রতিযোগিতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে একটি অঞ্চলে; এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। যদিও এ অঞ্চলে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের কোনো চিহ্ন নেই, তবে সেটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে চলমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটা আশাতীত পরিবর্তন হয়েছে। এদিকে যেমন নতুন করে শক্তিধর রাষ্ট্রের উত্থান হয়েছে, তেমনি অঞ্চলভেদে বেড়েছে আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি এবং বদলে গেছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গতিধারাও। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা হারাচ্ছে এবং সেই স্থানে আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর আবেদন বাড়ছে। একসময় যেমন ভাবা হতো যে, আধুনিক মানুষ ধর্ম ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে; কিন্তু এখন আর সে সমীকরণ খাটছে না। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল ও আফগানিস্তানের রাজনীতিতে একদিকে যেমন বহিঃশক্তি নতুন মাত্রায় প্রভাব বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণও আগের তুলনায় অনেক বদলে গেছে। পুরাতন রাজনৈতিক শক্তিগুলো নানা কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পিছিয়ে পড়ছে আর নতুন রাজনৈতিক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে; মাঠের রাজনীতিতে তাদের অবস্থানও ভালো।
দীর্ঘদিন ধরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নিরাপত্তা ইস্যুতে পক্ষ বাছাইয়ের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলেছে। কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে পক্ষ বেছে নিয়েছে। আর কিছু দেশ নিজেদের রক্ষার জন্য শক্ত হাতে ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি দেশ সেটা সফলভাবে করতে পারলেও অন্যরা তা পারছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করার নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ ধরনের নীতিতে বা আচরণে অনেক গুণ থাকে। যেমন- কোনো পক্ষ গ্রহণ না করা। পরস্পরবিরোধী দুইপক্ষকে অনুসরণ, দুই পক্ষের সঙ্গে যৌথ পদক্ষেপ ও বৈচিত্র্যমুখিনতা। একটু পিছু হটা অবস্থান গ্রহণ। যাহোক, দেশগুলো তাদের ভৌগোলিক অবস্থান ও অভ্যন্তরীণ কারণে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে। একটি দেশের শাসকদের অভিজাত সম্প্রদায় কোন দিকে ঝুঁকে পড়ে, অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সেটা বড় কারণ। কম্বোডিয়া, লাওস এবং আপাতভাবে মিয়ানমার এরই মধ্যে চীনের পক্ষ বেছে নিয়েছে। সাম্প্রতিককালে চীনের প্রতি বিশেষ অনুরাগ দেখা যাচ্ছে থাইল্যান্ডের। যদিও দেশটি কৌশলগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। ১৯৭৫ সালে মে মাসে সে সময়কার থাইল্যান্ড সরকার তাদের দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনাকে সরিয়ে নিতে বলেছিল। সে সময় থাইল্যান্ডে ২৭ হাজার মার্কিন সেনা ও ৩০০ যুদ্ধবিমান ছিল। তা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত থাই সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের বিমানঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরিকে থাইল্যান্ডের বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেয় তারা। সিঙ্গাপুর নিরপেক্ষ থাকার দাবি করেছে। সেটা প্রমাণের জন্য তারা চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে এবং যৌথভাবে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ মালাক্কা প্রণালির নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।
কিন্তু সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা স্মারক, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক’ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সদস্যদের সিঙ্গাপুরে আমন্ত্রণ জানানো- এসব বিবেচনায় বলা চলে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে সত্যিকার অর্থেই ঝুঁকে পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে চীন যতই উদ্বেগ প্রকাশ করুক না কেন, সিঙ্গাপুর সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র শিবিরে চলে যাবে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাঁচ দেশের প্রতিরক্ষা আয়োজনে যুক্ত হতে পারে। এ জোটের অন্য দুটি দেশ অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য। অস্ট্রেলিয়ার বিমানবাহিনীকে মালয়েশিয়া তাদের বাটারওয়ার্থ বিমানঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বিমানগুলো দক্ষিণ চীন সাগরসংলগ্ন এলাকায় চীনে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর নজরদারি করে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া তাদের ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিমানগুলোকে জ্বালানি নেয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এরপরও মালয়েশিয়া এখন পর্যন্ত প্রতিরোধের চেষ্টা করে চলেছে। ইন্দোনেশিয়া এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিমানগুলোকে তাদের দেশে অবস্থান করতে দিতে সম্মত হয়নি। কিন্তু ‘বেড়া তৈরির’ ক্ষেত্রে যথাক্রমে সবচেয়ে খারাপ ও সবচেয়ে ভালো মডেল হতে পারে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। ফিলিপাইনের অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যে চীনবিরোধী ও যুক্তরাষ্ট্রপন্থি অবস্থানের কারণে ফার্দিনান্দো মার্কোস জুনিয়র প্রশাসন আগের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের নীতি পরিত্যাগ করেছেন। দুতার্তের নীতি ছিল, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ওয়াশিংটনকে পাশ কাটিয়ে চলা। কিন্তু মার্কোস দক্ষিণ চীন সাগরে বিশাল যৌথ মহড়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফিলিপাইনের সামরিক সম্পর্ক জোরালো করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির ক্ষেত্রও বাড়িয়েছে তারা।
ইডিসিএ চুক্তির আওতায় আগে ফিলিপাইনের পাঁচটি জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রবেশের সুযোগ ছিল, নতুন করে আরও চারটি জায়গায় এখন থেকে প্রবেশ করতে পারবে। নতুন এ জায়গাগুলোর মধ্যে উত্তর লুজানও রয়েছে, যেটি তাইওয়ান থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চীন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, এ জায়গাগুলো যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দাগিরির কাজে এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে সংঘাত শুরুর প্রস্তুতির কাজে ব্যবহার করতে পারে। বেইজিংয়ের ক্ষোভ প্রশমনের জন্য ম্যানিলা মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু করে। সিনেটে শুনানিতে ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইডিসিএ চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রকে যেসব অঞ্চলে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেগুলোয় মার্কিন সেনাদের অস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তুলতে দেয়া হবে না। ইডিসিও অঞ্চলের কোনোটিতেই অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর কাজে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা তাদের কোনো বিমান, জাহাজ বা অন্য কোনো যান মেরামত কিংবা জ্বালানি ভরার কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। এর ফলে চীনকে ঠেকানোর জন্য ফিলিপাইনের সঙ্গে করা যুক্তরাষ্ট্রের এ কৌশলগুলো চুক্তি নিশ্চিতভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে হেলে পড়া ফিলিপাইনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত তৈরির জন্য চীন এখন ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী আচরণ শুরু করতে পারে। এ ছাড়া চীন ফিলিপাইনের ওপর অর্থনৈতিক প্রতিশোধ নিতে পারে, যেটা মার্কোস প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলবে। তাতে অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনপন্থি ও যুক্তরাষ্ট্রপন্থিদের মধ্যে বিভক্তি বাড়তে পারে। ফলে এমন এক রাজনৈতিক সংকট তৈরি হতে পারে, যাতে করে যুক্তরাষ্ট্রকে দৃশ্যের বাইরে বের করে দিতে পারে। যেমনটা আগেও ঘটেছে।
ফিলিপাইনের এ দৃষ্টান্ত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলো এখন বোধ হয় ভালো করেই বুঝতে পারছে, যে কোনো এক পক্ষে যাওয়ার বিপদ কতটুকু। আর সে কারণেই তারা তাদের চারপাশের প্রতিরোধ আরও শক্ত করছে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের অচল প্রহেলিকার মধ্যে নিজেদের ফেলতে চায় না কেউ। ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল নীতি প্রণয়ন ও পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের কাছ থেকে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুইপক্ষকে প্রকাশ্যে ক্ষুব্ধ না করে কিংবা কোনো এক পক্ষে হেলে না পড়ে, খুব দক্ষতার সঙ্গে ভিয়েতনাম তাদের নিরাপত্তাকৌশল ঠিক করতে পেরেছে। পরাশক্তির হাতে নিষ্পেষিত হওয়ার দুঃসহ ইতিহাস রয়েছে ভিয়েতনামের। দেশটির গৃহযুদ্ধ ছিল পরাশক্তিগুলো মতাদর্শিক লড়াইয়ের ফলাফল। ভিয়েতনাম কৌশলের দিক থেকে রাশিয়ার মিত্র। চীনের সঙ্গে তাদের সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী ভিয়েতনামের বন্দরে ভিড়তে না দেয়ায় সম্প্রতি ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই সম্পর্কটাতে চিড় ধরেছে। চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক থাকলেও ভিয়েতনাম তাদের সমুদ্রসীমার দাবি তুলে ধরতে কোনো দ্বিধা করেনি। এ ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম অনেক না-এর নীতি বজায় রেখে চলেছে। এমনকী, কোনো সামরিক জোটে যুক্ত না হওয়া, বিদেশি কোনো দেশের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে দেশকে ব্যবহার হতে না দেয়া, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কোনো একটির পক্ষে না যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ কিংবা বলপ্রয়োগের হুমকি না দেওয়া। পরাশক্তির মধ্যকার সামরিক সংঘাতের উত্তাপে জড়িয়ে না পড়তে ভিয়েতনামের এ না নীতি শক্ত বেড়া হিসেবে কাজ করেছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সাঁড়াশি চাপে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি শুধু আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক ক্ষেত্রেও একটা পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে।
ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের অভিজ্ঞতা থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি শিক্ষা নিতে পারে, তাহলে দুই পরাশক্তির মধ্যকার সংঘাতে জড়িয়ে পড়া থেকে তারা তাদের দেশগুলোকে দূরে রাখতে পারবে। এসব কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন অনেকটাই অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভিয়েতনামে প্রায়ই চীনবিরোধী বিক্ষোভ হয়। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলমান জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়ায় অবৈধ চীনা অভিবাসন ও মুসলমান সংখ্যালঘুদের সঙ্গে চীনের আচরণের বিরোধিতায় বিক্ষোভ হতে দেখা গেছে। এমনকি লাওসের মতো ছোট্ট দেশেও চীনবিরোধী সুর শোনা যায়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতারা হয়তো অর্থনৈতিক পরিণতির ভয়ে সরাসরি চীনের সমালোচনা করতে সাহস পাবেন না। তবে খুব বেশি চীন ঘনিষ্ঠ হওয়া নিয়ে জনগণের ক্ষোভের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে তাদের। ফলে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনাদের জন্য আধিপত্যের নিশ্চয়তা এখনও বহুদূর। এ অঞ্চলের দেশগুলো ধনী প্রতিবেশীর বিনিয়োগের লোভ না ছাড়লেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিয়মতান্ত্রিক শাসন তারাও প্রত্যাশা করে। দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্ব থেকে এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কী সুবিধা বের করে আনতে পারে- সেটাই দেখার বিষয়।