রাজধানীর জলাধার উধাও

সবুজ ঢাকার প্রত্যাশা

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর এবার তীব্র গরম তথা তাপদাহ পরিবেশগত সমস্যাটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে জনমানসে। নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদীরা এ নিয়ে কথা বলছেন। তবে বাস্তবতা হলো, ঢাকার জলাধার কমছে, কমছে সবুজের সমারোহ। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে ‘২৮ বছরে রাজধানীর জলাধার ও সবুজ নিধন : বাস্তবতা ও উত্তরণের পথনকশা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়, গত ২৮ বছরে রাজধানী থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের জলাধার উধাও হয়ে গেছে। এ সময় প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার সবুজের মৃত্যু হয়েছে। ১৯৯৫ সালে রাজধানীতে জলাধার ও জলাভূমি ছিল ৩০ দশমিক ২৫ বর্গকিলোমিটার। ২০২৩ সালে তা মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর মাত্র ২ দশমিক ৯১ শতাংশ জলাধার ও ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ সবুজ রয়েছে। অথচ একটি আদর্শ শহরে ১২ শতাংশ জলাভূমি ও ১৫ শতাংশ এলাকায় সবুজ থাকা প্রয়োজন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৮ বছরে রাজধানীর সবুজ, জলাধার, জলাভূমি, উন্মুক্ত স্থান, গণপরিসর, পতিত জমি- সবই ব্যাপক মাত্রায় কমেছে। ফাঁকা জায়গা ও পতিত জমিও কমেছে। একটি আধুনিক শহর হিসেবে দাবি করা ঢাকার জন্য এহেন অবস্থা খুবই পীড়াদায়ক।

আমরা জানি, বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলাবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এক্ষেত্রে সবচেয় ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। কিন্তু খোদ রাজধানীর ঝুঁকি নেহাত কম নয়। আবহাওয়া দ্রুত বদলাচ্ছে নাগরিকমাত্রই তা উপলব্ধি করতে পারছে। উষ্ণতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার জন্য নাগরিকদের সুষ্ঠুভাবে বসবাস কষ্টকর হয়ে উঠছে। নিজ দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারার মধ্যে রয়েছে গভীর বিড়ম্ববনা। বাস্তবে আমরা এমনই এক পরিবেশে বসবাস করছি। প্রশ্ন হলো, এমন হলো কেন? ওই প্রতিবেদন প্রকাশকালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী কিছু কথা বলেছেন, যা এ প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, নানা অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ায় ভরাট-দখলদারিত্বের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হতে সময় লাগছে। মানুষই পরিবেশ দূষণ করে এবং মানুষই দূষণ প্রতিরোধ করতে পারে। দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ না হলে ঢাকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না। কথা সত্য। তবে ভরাট-দখলদারিত্ব এখনও চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত। সুযোগসন্ধানীরা নানা উসিলা ও প্রক্রিয়ায় জলাশয় ও সবুজ ধ্বংস করছে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয়, উন্নয়নের নামে এখনও ঢাকায় কর্তৃপক্ষ গাছ কাটছে। এখানে নাগরিক দাবি ও প্রতিবাদকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হচ্ছে। ফলে যান্ত্রিক ও তথাকথিত উন্নয়নে পরিবেশ হয়ে উঠছে ক্রুদ্ধ, নাগরিকদের জন্য অসহনীয়, যা এরই মধ্যে প্রাচ্যের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের শহর ঢাকাকে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য নগরীতে।

আমরা জানি, নগরায়ণ একটি কৃত্রিম ব্যবস্থা। ইট-পাথর-কংক্রিটের গাঁথুনিতে গড়ে ওঠে শহর। এজন্য প্রাচীনকাল থেকে দেখা যায়, ইট-পাথরের পাশাপাশি সবুজের সমারোহ গড়ে তোলা, জলাশয়ের ব্যবস্থা রাখা আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হয়ে বিবেচিত হয়ে আসছে। অতীত থেকে আমরা জানি, ঢাকা শহরে এক সময় প্রচুর জলাশয় ছিল, ছিল সবুজ-ফুলের উদ্যান। এগুলো সংকুচিত করা কিছুতেই যৌক্তিক হয়নি। এখনও সময় আছে জলাশয় উদ্ধার কার্যক্রম জোরদার করা। মনে রাখতে হবে, ঢাকা মহানগর বাংলাদেশের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। আর বসবাসযোগ্য ঢাকা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য এবং রাজধানী ঢাকা না বাঁচলে আমাদের অর্থনীতি বাঁচবে না। অতএব, ঢাকাকে ফিরিয়ে দেয়া হোক জলাশয়, সবুজের সমারোহ।