প্রচণ্ড গরমে রোগ বাড়ছে

সতর্কতা অবলম্বন দরকার

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রীষ্মকালীন কিছু রোগ আছে, তা সবারই জানা। বিশেষ করে এ সময়ে শিশুরা নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়। আর এবার গরমের বাড়াবাড়িটা একটু বেশিই। দেশজুড়ে প্রচণ্ড দাবদাহ বইছে। এই দাবদাহে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ নানা বয়সের মানুষ। শুধু পানিবাহিত রোগই নয়, এই মৌসুমে ডেঙ্গুতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। বাড়ছে চর্মরোগও। এদিকে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪০০-এর মতো। বর্তমানে প্রতিদিন ৬৫০ থেকে ৭০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী হাসপাতালে আসছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব রোগী চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসছে। বলাবাহুল্য, এসব রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তা সহজেই অনুমান করা যায়। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি, যা ১৫ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ওই দিন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে হাবিবা নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কথাও বলেন চিকিৎসকরা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা এরই মধ্যে দেয়া হয়েছে।

প্রসংগত গত এক সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে প্রচণ্ড দাবদাহ বইছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকায় মানুষ বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে। শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় মানুষ দুর্বল হয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে বিষয় বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বলেছেন। এই নিয়ে চিকিৎসরা নানা পরিমর্শ দিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, যারা শ্রমজীবী মানুষ, তারা যেন রোদে দুই ঘণ্টা কাজ করে বিশ্রাম নেন। কারণ টানা কয়েক ঘণ্টা রোদে কাজ করলে অতিরিক্ত ঘামে শরীর পানিশূন্য হয়ে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। এ কারণে রোদে থাকলেও যেন ছাতা ব্যবহার করা হয়। আর গরম থেকে রক্ষায় ঢিলেঢালা জামা পরতে হবে। কারণ প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ সময়ে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। তবে খাবার স্যালাইন খাওয়া উত্তম। বাসি ও খোলা খাবার খাওয়া যাবে না। এমনকি সেটা ঘরে রান্না হলেও। এই গরমে প্রয়োজন না হলে ঘরে থাকাই উত্তম। স্মর্তব্য, পরিবেশের তাপমাত্রা বেশি বাড়লে শরীরে পানিশূন্যতা, হিট ক্রাম্প, অবসাদ, হিট স্ট্রোক ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। গরমে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর লবণ ও পানি হারায় আমাদের ত্বক। এ পানির ঘাটতি পূরণ না করলে পানিশূন্যতা হতে পারে। এর লক্ষণ হিসেবে মাথা ঝিমঝিম করে, ক্লান্তি লাগে, মেজাজ খারাপ হয়, প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যায়।

দাবদাহ একটি প্রকৃতিগত দুর্যোগ। এটাকে রোধ করা কোনো উপায় নেই। তবে কিছু ব্যবস্থা অবলম্বন করলে স্বস্তি ও রোগমুক্ত থাকা যায়। এই সময়ে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন অবশ্যই আনতে, যা ওপরে এরই মধ্যে বলা হয়েছে। পাশাপাশি খাবারে কিছু বিধিনিষেধ মানতে হবে। বারবার বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। শসা, লেবু-পানি, ডাব ইত্যাদি ফল বেশি বেশি খাওয়া উচিত। অ্যালকোহল, চা-কফি এড়িয়ে যাওয়া ভালো। হিট স্ট্রোক থেকে মৃত্যুও হতে পারে, তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। এ সময়ে শিশুদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যে কোনো সমস্যায় ছোট-বড় সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এ নিয়ে সরকারেরও যথাযথ পদক্ষেপ থাকা দরকার।